১৭ টি বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের চির সবুজ বাংলাদেশ। আমাদের দেশ আয়তনে ছোট হলেও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করতে সবাই ভালবাসে। ভ্রমনের মাধ্যমে যেমন আনন্দ পায় তেমনি আমাদের শরীর ও মনকে সতেজ করে তুলে।
ক্ষুদ্র আয়তনের দেশটিতে রয়েছে বন এবং সমুদ্র যেখানে সকল সময় বহু পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এছাড়াও আমাদের দেশে রয়েছে বিভিন্ন প্রাচীন স্থাপত্য যা আমাদের ইতিহাসকে আরো গৌরবান্বিত করছে। সুতরাং, আজকের আর্টিকেলে, বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থান গুলো নিয়ে আলোকপাত করব। আর আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু হয়ে থাকেন আশা করি তাহলে আপনি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধরনা পেয়ে যাবেন। চলেন তাহলে শুরু যাক।
দর্শনীয় স্থানের প্রয়োজনীয়তাঃ
আমাদের নিত্য দিনের কাজের চাপ ও একঘেয়েমি হতে নিস্তার পেতে আমরা সকলেই চাই একটু খানি চিত্ত-বিনোদন। এর জন্যই পরিবার পরিজনের সাথে সুন্দর সময় পার করতে দর্শনীয় স্থান ভ্রমনের বিকল্প আর কিছু নেই।
এছাড়া অনেক দর্শনীয় স্থান গুলো একটি দেশ ও জাতির পরিচয় বহন করে। একই সাথে এটি দেশের অর্থনৈতিক খাতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কারন একটি দেশের দর্শনীয় স্থান গুলোতে যতবেশি পর্যটক আসবে ততই বেশি আয় করতে পারবে এই পর্যটন খাত হতে। যা দেশের অর্থনৈতিক খাতকে গতিশীল করে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোঃ
সেন্টমার্টিন দ্বীপঃ

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হল সেন্টমার্টিন। যা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের কক্সবাজার জেলা থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে ১৭ বর্গ কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপকে স্থানী ভাষায় নারিকেল জিন্জিরা বলে ডাকা হয়। অপূর্ব সৌন্দর্য্যমন্ডিত প্রাকৃতিক এই দ্বীপটি মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষকে তার সৌন্দর্য্য দ্বারা বিমোহিত করে। তাই বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান হিসেবে করে নিয়েছে। প্রতি বছর এই স্থানে অসংখ্য পর্যটক ঘুরতে আসেন। দ্বীপে রয়েছে অসংখ্য সারি সারি নারিকেল গাছ যা পর্যটকদের বিমোহিত করে বার বার।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতঃ
কক্সবাজার হচ্ছে বাংলাদেশে অবস্থিত একটি সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে বিস্তৃত। সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভীড় লেগেই থাকে। এখানে শুধু মাত্র যে দেশি পর্যটকদেরই আনাগোনা থাকে তা কিন্তু নয় বরং এখানে বিপুল পরিমান বিদেশি পর্যটকদের ও আগমন ঘটে সারা বছর।

কারণ এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত নয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার ভ্রমণের পাশাপাশি আপনি আরো কিছু স্থান ভ্রমন করতে পারবেন যেমন হিমছড়ি, লাবণী পয়েন্ট, ইনানী বিচ, সারি সারি ঝাউবন, বালুর নরম বিছানা ইত্যাদি।
সাগরকন্যা কুয়াকাটাঃ

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা।দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মাত্র সমুদ্রসৈকত যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত একসাথে দেখা যায়। ১৮ কিলো মিটার দৈর্ঘ্যের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর সমুদ্র সৈকত। যার ফলে সারাবছরই এখানে অসংখ্যক পর্যটকদের আনাগোনা থাকে।
সুন্দরবনঃ

বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে সুন্দরবন অবস্থিত। সুন্দরবন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অখণ্ড বনভূমি! সুন্দরবন এর আয়তন প্রায় ১,৩৯,৫০০ হেক্টর (৩,৪৫,০০০ একর)। সুন্দরবনে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে আসেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের লীলাভূমি সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছ। সুন্দরবনে সুন্দরী গাছ ছাড়াও রয়েছে গরান, বাইন গেওয়া ইত্যাদি। আর প্রাণীর ভিতর রয়েছে বাঘ, সিংহ, হরিণ, হাতি, কুমির ইত্যাদি।
জাফলংঃ

জাফলং পর্যটকদের জন্য একটি বিখ্যাত জায়গা। এটি ভারতের মেঘালয় সীমান্তের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের গোয়াইনহাট উপজেলায় জাফলং অবস্থিত। এখানে অনেক পর্যটক ঘুরতে আসেন বিশেষ করে বর্ষাকালে।
সাজেকঃ

সাজেক ভ্যালি বা সাজেক উপত্যকা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাই উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বিখ্যাত পর্যটন স্থান। রাঙামাটির একেবারে উত্তরে অবস্থিত এই সাজেক ভ্যালিতে রয়েছে দুটি পাড়া- রুইলুই এবং কংলাক। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বর্তমানে এটি পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি স্থান। যার ফলে দিন দিন সেখানে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাতারগুলঃ

রাতারগুল সিলেটের গোয়াইনঘাটে অবস্থিত। এখানে হিজলে ফল ধরে প্রচুর পরিমাণে। বট গাছের সংখ্যাও অনেক বেশি। বড়ই অদ্ভুত এই জলের রাজ্য। কোনো কোন গাছের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে। তাছাড়া অসংখ্য পাখিও দেখতে পাওয়া যায়।
নিঝুমদ্বীপঃ

বাংলাদেশের দক্ষিণের পর্যটন কেন্দ্র হল নোয়াখালী হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ। শুধুমাত্র সৌন্দর্য্যেই নয় প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভবনাও রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে ওঠা দ্বীপটির একদিকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গ, অন্যদিকে ছুটে আসা হিমেল হাওয়া। চারদিকে সবুজের সমারোহ, গাছে গাছে পাখিদের সুমধুর গান, থেকে থেকে মাঝিদের কন্ঠে গেয়ে ওঠা গান, অজস্র মাছ, আর সোনার হরিণের সম্পদে পরিপূর্ণ ভাণ্ডার এই নিঝুমদ্বীপ ।
নাফাকুমঃ

বান্দরবানের বিস্ময়কর সৌন্দর্য্যের নাম হল নাফাকুম জলপ্রপাত। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বান্দরবান জেলা। ভ্রমণপিয়াসু মানুষের কাছে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে এর অবস্থান। বাংলাদেশের সর্ব পূর্বের উপজেলার নাম থানচি।
কান্তজির মন্দিরঃ

কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নের দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেঁপা নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত কারণ তিনতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিলো। কান্তজির মন্দির ১৮ শতকের দিকে নির্মিত একটি চমৎকার ধর্মীয় স্থাপনা। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত যা লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত।
মহাস্থানগড়ঃ

মহাস্থানগড় রাজশাহী বিভাগের বগুড়ায় জেলায় অবস্থিত। পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল বর্তমান বগুড়ার মহাস্থানগড়। মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং সেন আমলে বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বিশেষ করে প্রশাসনিক গুরুত্ব অনেক ছিল। করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে এটি অবস্থিত।
বিছানাকান্দিঃ

সিলেট বিভাগ পর্যটনের শহর। একদিকে দেশের সীমান্তঘেরা পাথরের বিছানা। অন্যদিকে মেঘালয় পাহাড় থেকে আসে ঠাণ্ডা পানি। পাশেই রয়েছে পাহাড়ি সবুজের সমারোহ। ছোট বড় পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা বিছানাকান্দিতে সৃষ্টি করে এক মনোরম পরিবেশ।
টাঙ্গুয়ার হাওরঃ

টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরা (ঝরনা) এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। যার ফলে প্রতি বছর বর্ষাকালে এখানে পর্যটকদের মেলা বসে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরঃ

মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ চালু হয়। জাদুঘরে ১০,০০০ অধিক হস্তনির্মিত এবং চিত্র প্রদর্শনী রয়েছে। এটি বর্তমানে পুনর্নির্মিত হচ্ছে। জাদুঘরকে দেশের সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে মনে করা হয়। কারণ এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংরক্ষণ করা হয়। আপনার দেশের ঐতিহাসিক ঘটনা ও বিভিন্ন চিত্রকলা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজম্মকে জানাতে সাহায্য করে।
লালবাগ কেল্লাঃ

মোগল আমলের স্থাপত্যকীর্তি হল লালবাগের কেল্লা। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষার্ধে তৈরি করা হয়। এই কেল্লাতে রয়েছে পরীবিবির মাজার, দরবার গৃহ, হাম্মামখানা, মসজিদ, দুর্গ ইত্যাদি। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে লালবাগ কেল্লার অবস্থান।
আহসান মঞ্জিলঃ

বুড়িগঙ্গার পাড়ঘেঁষে কুমারটুলী এলাকায় প্রাচীন এই সাম্রাজ্যের অবস্থান। মঞ্জিলটি রংমহল ও অন্দরমহল দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রাসাদটির উপরে অনেক সুদৃশ্য গম্বুজ রয়েছে। এছাড়া একটি জাদুঘরও রয়েছে।
ষাট গম্বুজ মসজিদঃ

ষাট গম্বুজ মসজিদ সুলতানি আমলে নির্মিত হয়। সুলতানী আমলে নির্মিত সবচেয়ে মসজিদ এটি। খান জাহান আলি এটি নির্মাণ করেন ।মসজিদটি সাধারণত নামাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা বেশ দেখা যায়।
নীলগিরিঃ

নীলগিরি দেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র। বান্দরবানের থানচি উপজেলায় এর অবস্থান। মেঘের সঙ্গে মিতালি করে মেঘ ছোঁয়ার সুযোগ রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে নীলগিরিতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের এক অপরূপ লীলা খেলা। সবুজের সমারোহে আপনি হারিয়ে যাবেন।
উপসংহারঃ
দেশের দর্শনীয় স্থান গুলো হল চিত্তবিনোদনের প্রাণ কেন্দ্র। তাছাড়া ঘুরলে মন ও শরীর দুটোই ভাল থাকে। তাই দেরি না করে আজকেই বেড়িয়ে পড়ুন আপনার পছন্দের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উদ্দেশ্যে প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে। আপনার ভ্রমণ সুন্দর হোক।

History and Civilization Discipline,
Khulna University