সহজেই সাধারণ সর্দি-কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়
কাঁশি সাধারণত স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ নয়।তবে এটি একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ক্রিয়া যা শ্বাসনালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
কিন্তু কখনো যদি আপনার একটানা কাশি হয় এতে আপনি বিরক্তিকর হতে পারেন। তাছাড়া ধুলা, বালি, ধোঁয়া এবং দূষণের ফলে বা শীতের সময় অবস্থা আরও খারাপ আকার ধারণ করতে পারে।আপনি যদি এমন সমস্যায় ভুগে থাকেন তবে কাঁশি বন্ধের জন্য বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়। যা ব্যবহার করলে আপনি সহজেই প্রতিকার পাবেন।
আজকের এই প্রবন্ধে,আপনাদের সাথে,সহজেই সর্দি-কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বলবো।চলেন শুরু করা যাক-
মধু:
সর্দি এবং কাশির জন্য মধু একটি পরীক্ষিত ঘরোয়া প্রতিকার। এর গলা ব্যথা কমাতে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলো সাহায্য করে। লেবুর রস, ভেষজ চা বা হালকা গরম পানির সাথে ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার পান করলে উপকার পাবেন।
আদা:
কাঁশির সমস্যা কমাতে আদা বেশ উপকারী।কাঁশি নিরাময়ের অন্যতম কার্যকরী প্রতিকার হল আদা চা বা মধু এবং আদার রসের সাথে কালো মরিচ মিক্সড করে খাওয়া।তবে বেশি আদা চা পান করা যাবে না। কারণ এতে আপনার পাকস্থলীর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
তুলসি পাতা:
কাঁশি দূর করার জন্য তুলসি পাতাও বেশ উপকারী।কারণ এর পাতায় মেন্থল নামক একটি যৌগ থাকে যা কাঁশি এবং গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।তাছাড়া শ্লেষ্মা কমাতেও তুলসি পাতা সাহায্য করে।আপনি চাইলে তুলসি পাতার তেল অ্যারোমাথেরাপি হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
লবণ-পানির গার্গল করা:
গলার খুশখুশে ভাব কমাতে এবং শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতে লবণ-পানির গার্গল বেশ উপকারী।এক কাপ হালকা গরম পানিতে ১/৪ চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে একাধিকবার গার্গেল করুন।তবে শিশুর জন্য প্রতিকারটি নয়।কারণ শিশুরা ঠিকমতো গার্গল করতে পারে না, দেখা যায় গার্গলের সময় তাঁরা লবণের পানি গিলে ফেলতে পারে।
ইউক্যালিপটাস তেল:
নিশ্বাস পরিষ্কার রাখতে ইউক্যালিপটাস তেল সাহায্য করে।কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেলের সাথে নারিকেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে বুকে এবং গলায় ঘষুন।কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস তেল এক বাটি গরম পানিতে যোগ করুন এবং ভাপ নিন।এতে নিঃশ্বাস তো পরিষ্কার হবে সাথে কাঁশিও দূর হবে।
সর্দি-কাঁশি দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ
বর্তমানে সর্দি-কাঁশির সমস্যা গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীত যেকোন মৌসুমেই দেখা দেয়।এ সময় মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, বুকে কফ জমে যাওয়া, কাঁশি, শ্বাসকষ্ট প্রায়ই দেখা যায়।তবে আপনি চাইলে ঘরে বসেই এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন। চলেন জেনে নিই সমাধানগুলিঃ
আদা চা:
আদা চা খেলে সর্দি-কাঁশি দূর হয়।গরম পানি বা গরম চায়ে আদা কুচি করে দিয়ে পান করুন।এতে খুব তাড়াতাড়ি আপনার সর্দি-কাশির সমস্যা দূর হবে।
দুধ ও হলুদ:
দুধ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।এজন্য এক গ্লাস গরম দুধের মধ্যে ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।কারণ হলুদে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে,যা সহজেই সংক্রমণ রোধ করে।ফলে আপনি সহজেই সর্দি-কাশির কষ্ট থেকে মুক্তি পাবেন।
রসুন:
সর্দি-কাশি দূর করতে রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। এছাড়াও রসুনে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিফাংগাল উপাদান রয়েছে,যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।প্রতিদিন চার-পাঁচ কোয়া রসুন ঘি দিয়ে ভেজে নিয়ে গরম থাকতেই খেয়ে নিন।এতে আপনি সর্দি-কাঁশির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
লেবু ও মধু:
আদা চায়ের মতোই লেবু ও মধুর মিশ্রণটি বেশ উপকারী।প্রথমে এক গ্লাস পানি গরম করে নিতে হবে।তারপর দুই চা চামচ মধু ও এক চা চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে পান করলে সর্দি-কাশি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
শিশুর কাঁশি সারানোর ঘরোয়া উপায়ঃ
সর্দি কাশির সমস্যা ছোট- বাচ্চাদের যেন লেগেই থাকে।শুধু ঠাণ্ডা লাগলেই শিশুর কাশির সমস্যা হয় না।শিশুর কাশি সমস্যা বেশ কিছু কারণে হতে পারে।তবে চিকিৎসকরা সর্দি কাশির চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে শুরু করে দিয়েছেন।এক্ষেত্রে শিশুর কাঁশি সারানোর বেশ কিছু ঘরোয়া রয়েছে।নিচে সে গুলো দেওয়া হলঃ
গার্গল:
কাঁশি ও গলার ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে গরম পানিতে গার্গল করা সবচেয়ে কার্যকর উপায় এক গ্লাস গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে গার্গল করুন।দিনে অন্তত তিন বার গার্গল করা ভাল।
লেবু ও মধু:
এক চা চামচ লেবু পানিতে মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ান।কারন মধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে এবং বুক থেকে কফ দূর করে গলা পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
হলুদ ও মধু:
মধু গলা ভাল রাখতে মধুও সাহায্য করে।এক্ষেত্রে এক বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের হলুদের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
সরিষার তেল ও রসুন:
সরিষার তেল গরম করে এর মধ্যে সামান্য রসুন থেঁতো কিছুক্ষণ মিশিয়ে রাখুন।এরপর ঐ তেল দিয়ে মালিশ করুন শিশুর গলা, বুক, পিঠ, হাতের তালু ও পায়ের পাতায়।এটি এই উপায়ে ঠাণ্ডা-কাঁশি দ্রুত সেরে যাবে।
আদা ও মধু:
আদা সর্দি কাঁশি থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র কার্যকারী উপায়।এক টুকরা আদার সাথে মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। কিন্তু এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের মধু খাওয়া ঠিক নয়।
মিশ্রি:
কাঁশি থেকে মুক্তি পেতে আপনার বাচ্চাকে মিশ্রি খাওয়াতে পারেন।কারণ, মিশ্রি খেলে গলার আর্দ্রতা বজায় থাকে। যার ফলে বাচ্চার গলায় জ্বালা কম হয়।
গরম স্যুপ:
গরম স্যুপ খাওয়াতে পারেন যদি আপনার বাচ্চার কাঁশি হয়।এতে বাচ্চার কাঁশি কমবে সাথে গলা ব্যথাও কমে যাবে।
কফ কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায়ঃ
অনেক সময় ঠান্ডা লেগে আমাদের বুকে কফ জমে যায়।তবে এই কফ দূর করার বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে। নিম্নে সেগুলো সম্পর্কেই বলা হল-
আদা:
প্রথমে এক টেবিল চামচ আদা কুচি করে জলে মেশান।এরপর ঢাকনা দিয়ে এটি ঢেকে প্রায় ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এতে সামান্য মধু মিশিয়ে নিন ঠান্ডা হওয়ার পর।দিনে অন্তত তিনবার এটি পান করুন। দেখবেন কফ দূর হয়ে গেছে। তাছাড়া আপনি চাইলে এক টুকরো আদা মুখে নিয়ে চাবাতে পারেন।বুকের কফ বা শ্লেষ্মা শরীর থেকে বের করে দিতে আদার রস বেশ উপকারী।
লবণ জল:
সবচেয়ে সহজ আর সস্তা উপায় হল লবণ জল বুকের সর্দি ও কফ দূর করতে।কারণ লবণ জল শ্বাসযন্ত্র থেকে কফ দূর করতে সাহায্য করে।এক গ্লাস অল্প গরম জলের সঙ্গে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে দুই তিনবার গার্গল করুন।দ্রুত আপনার কফ কাঁশি দূর হয়ে যাবে।
হলুদ:
কারকুমিন নামের উপাদান যা হলুদে থাকে বুক থাকে।কফ ও শ্লেষ্মা দূর করে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট দ্রুত কমিয়ে দেয়। তাছাড়া হলুদের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা গলা ও বুকের অস্বস্তি, জ্বালা এবং ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ পানিতে এক চিমটে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে প্রতিদিন এটি দিয়ে গারগোল করুন।খুব তাড়াতাড়ি কফ কাঁশির হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
পেঁয়াজ:
পেঁয়াজের রস, লেবুর রস, মধু ও পানি একই পরিমাণে নিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে প্রায় ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নিন।এরপর সামান্য উষ্ণ এই জল দিনে অন্তত তিন থেকে চারবার পান করুন।এতে বেশ উপকার পাবেন।
আপেল সাইডার ভিনেগার:
দুই চা চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার এক কাপ সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে নিন।এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে দিনে অন্তত দুই-তিনবার এই পানীয়ও পান করুন।এভাবে প্রায় ৮-১০ দিন পান করুন। দেখবেন দ্রুত শ্লেষ্মার সমস্যার হবে।
শিশুর সর্দি সারানোর ঘরোয়া উপায়ঃ
শিশুর সর্দি সারানোর বেশ কিছু উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নিই,উপায়গুলো:
১.শিশুর সর্দি সারাতে আদা এবং মধু খাওয়াতে পারেন।আদার রস করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার খাওয়ান।
২.সর্দি সারাতে সরিষার তেল খুব উপকারী। দুই কোয়া রসুন এবং কিছু কালোজিরার বীজ দিয়ে সরিষার তেল গরম করুন।এই তেল দিয়ে আপনার শিশুর পায়ের পাতা, পিঠ, হাতের তালু এবং বুকে মালিশ করুন।
৩.অল্প কর্পূর দিয়ে নারিকেল তেল গরম করুন।এরপর আপনার শিশুর বুকে, পিঠে এবং গলায় মাখালে উপকার পাবেন।
৪.দুধের জায়ফল সর্দি সারতে খুব উপকারী।কয়েক চামচ দুধে এক চিমটি জায়ফল পাউডার দিয়ে একবার ফোটান এবং ঠাণ্ডা করে শিশুকে খাওয়ান।
দীর্ঘদিনের কাঁশি দূর করার উপায়ঃ
আপনার কাঁশি যদি পনেরো দিনের বেশি সময় ধরে থাকে তাহলে তাকে ক্রনিক কফ বা দীর্ঘদিনের কাশি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।নিচে দীর্ঘদিনের কাঁশি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় গুলো দেওয়া হল:
- পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে যাতে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়।
- গরম লবণ-পানি দিয়ে কুলি করতে হবে।
- আদা-মিশ্রিত পানি খেতে হবে।
- কাশির মাত্রা কমাতে মধু খেতে পারেন
- ডেক্রমিথোফেন ও সিওডোইফিড্রিন গ্রুপের কাঁশির সিরাপ খেতে পারেন।
কাশি দূর করার ঔষধঃ
কাঁশি কতটা বিরক্তিকর যারা সমস্যায় পড়েছে তারা হয়তো বুঝতে পারছেন।ঘরোয়া উপায়ে কাঁশি প্রতিকার না হলে, অবশ্যই ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে।ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই ঔষধ সেবব করতে হবে। নিচে কিছু ঔষধের নাম বলা হল, যা কাঁশি দূর করতে সাহায্য করবে।
বর্তমান বাজারে বিভিন্ন ধরনের সিরাপ পাওয়া যায় এর মধ্যে এডোভাস adovas syrup উল্লেখযোগ্য।প্রতিটি ঔষধ স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস কর্তৃক তৈরি করা হয়। যা 100 মিলি এবং 200 মিলি বোতল সাইজের পাওয়া যায়।বাজারে 100 মিলি সাইজের প্রতিটি ১০০ মিলি সাইজের বোতলের মূল্য ৭০ টাকা করে এবং প্রতিটি ২০০ মিলি সাইজের বোতলের মূল্য ১১০ টাকা করে। উপরোক্ত সিরাপটি কখনো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
রিমোকফ ঔষধ হচ্ছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কর্তৃক তৈরি যা কাঁশি দূর করার একটি জনপ্রিয় ঔষধ। বাজারে এই ঔষধটি দুটি সাইজের পাওয়া যায়।
- 100 মিলি সাইজের বোতল।
- 200 মিলি সাইজের বোতল।
১০০ মিলি সাইজের বোতল কিনতে আপনাকে ৬০ টাকা এবং ২০০ মিটার সাইজের বোতলের ঔষধটি কিনতে আপনাকে ১১০ টাকা খরচ করতে হবে।ঔষধ কেনার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। তাছাড়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ঔষধ সেবনের পূর্বে বাধ্যতামূলক ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আপনি যদি সিরাপ খেতে পছন্দ না করেন তাহলে আপনি এর পরিবর্তে ট্যাবলেট বা ঔষধ খেতে পারেন।এর পরিবর্তে আপনি খেতে পারেন ট্যাবলেট বা ঔষধ।একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড কর্তৃক তৈরি ১০০ এমজি ট্যাবলেটের ঔষধ বাজারজাত করে থাকে।যা শুকনো কাঁশির জন্য বেশ কার্যকারী।
আশা করি, আজকের এই প্রবন্ধটি যারা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন,তাঁরা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন ঘরোয়া উপায়ে সহজেই সর্দি- কাঁশির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

History and Civilization Discipline,
Khulna University