১০টি দ্রুত দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

আপনার বা আমার যে-কারোর যেকোনো সময় দাঁতে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত  দাঁতের গোড়ায় বা মাড়িতে সামান্য কিছু হলেই মারাত্মক যন্ত্রণা হয়। তারপর ব্যথা থেকে শুরু হয় মাথা ব্যথা, চোখব্যথা ইত্যাদি। তাই  প্রাথমিকভাবে দাঁতে ব্যথা কমানোর জন্য অনেকেই পেইনকিলার বা  ঔষধ খেয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করে থাকেন।

তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যেগুলো জানা থাকলে সহজেই দাঁতের ব্যথা থেকে সহজেই মুক্তি লাভ করতে পারবেন। তাহলে চলেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেভাবে দাতের ব্যথা কমানো যায় সেগুলো জেনে নিইঃ

১.হঠাৎ করে আপনার দাঁতে ব্যথা শুরু হয়েছে। অনেক যন্ত্রণা করছে। ডাক্তারের কাছে যেতেও আপনার বেশ সময় লাগবে। তাহলে এখন কিভাবে দাঁতের ব্যথা কমাবেন। আপনার ঘরে যদি লবঙ্গ থাকে, দুটি লবঙ্গ একসাথে থেঁতো করে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে আপনার দাঁতে যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে  লাগান। তাছাড়া দুটি লবঙ্গ নিয়ে চিবিয়ে ব্যথার স্থানে জিভ দিয়ে বেশ কিছু সময় চেপে ধরুন। আশা করি আপনার দাঁতের ব্যথা কিছুটা হলেও লাভব পাবে।

২. আপনার বা আমার সকলেরই ঘরে রসুন থাকে। তাই এক কোয়া রসুন থেঁতলে নিয়ে অল্প একটু লবণ সাথে মিশিয়ে দাঁতে লাগান। দেখবেন আপনার দাঁতের ব্যথা কমে গেছে। অনেক সময় দাঁতে বেশি যন্ত্রণা হলে, সে সময় এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে হবে।

৩. লবণ আর গোলমরিচ একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে। দাঁতে কয়েক মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ব্যবহারের কয়েকদিন পর আপনার ব্যথা কমে যাবে। তবে ব্যথা কমে গেলেও কয়েকদিন পর্যন্ত  এটি ব্যবহার করুন।

৪. দাঁতে ব্যথা হলে, কাঁচা পেঁয়াজের কিছু টুকরা চিবিয়ে খেয়ে হবে। আমরা জানি, কাঁচা পেঁয়াজে অনেক ঝাঁজ থাকে। পেয়াজে বেশি ঝাঁঝ থাকার কারণে  দাঁতের ওপর কাঁচা পেঁয়াজ চেপে রাখলে বেশ আরাম পাওয়া যায়।

৫. কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যথা দূর করতে আধ চা চামচ হিং গুঁড়ো, দুই টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে দাঁতে লাগান দেখবেন ব্যথা গায়েব হয়ে গেছে।

See also  এলার্জি, ব্রণ, চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার পদ্ধতি

৬. দাঁতের ব্যথা কমাতে, পেয়ারা পাতা দারুণ উপকারী। দুটি পেয়ারা পাতা ভালমত চিবিয়ে ব্যথাওয়ালা দাঁতে কিছু সময় চেপে রাখুন। দেখবেন আরাম পাচ্ছেন এবং ব্যথাও কমে গেছে আগের থেকে অনেক।

৭. দূর্বা ঘাসের রস দাঁতের ব্যথা কমাতে পারে। এটা দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সহায়তা করে।

৮.আপনার হাতের কাছে যদি কোনো কিছু না পাওয়া গেলে যদি শুধু বরফ পাওয়া যায়, তবে কাজ হবে। এক টুকরা বরফ তুলা বা কাপড়ে মুড়ে দাঁতে চেপে রাখুন, ব্যথা কমতে শুরু করবে।

৯. অ্যালোভেরার সাহায্যে দাঁতের ব্যথা কমাতে পারেন। কারণ এতে থাকে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা দাঁতের জীবাণুকে নষ্ট করে ফেলে। যার ফলে খুব দ্রুত ব্যথা কমে যায়।

১০. দাঁতের ব্যথা কমানোর করার জন্য হাইড্রোজেন পার অক্সাইড খুব দ্রুত কাজ করে। দাঁতে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলোকে সাথে সাথে  মেরে ফেলে। প্রথমে আপনি পানি ও হাইড্রোজেন পার অক্সাইড সমপরিমাণ নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। ওই মিশ্রণ দিয়ে গলগল করে কুলিকুচি  করুন। তবে কোনোভাবেই গিলে বা খেয়ে ফেলা যাবে না। এভাবে ৫-৬ মিনিট করার পর, পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখাবেন ব্যথা কমে গেছে।

তবে আপনার দাঁতে যদি অতিরিক্ত ব্যথা হয় তবে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর উপায়:

আমাদের শুধুমাত্র যে দাঁতই ব্যথা হয় তা কিন্তু নয়। দাঁতের পাশাপাশি মাড়িতেও কিন্তু ব্যথা হতে পারে। দাঁতের ব্যথার মতোই মাড়ির ব্যথাও  অনেক যন্ত্রণাদায়ক হয়। চলেন জেনে নিই, সহজেই দাঁতের মাড়ি কমানোর উপায়গুলোঃ

১) সেঁক দেওয়া

দাঁতের মাড়ির ব্যথা কমানোর  অন্যতম কার্যকর উপায় হল সেঁক দেওয়া। আপনি চাইলে গরম সেঁক পানি দিয়েও দিতে পারেন। আবার ঠান্ডা পানি দিয়েও দিতে পারেন। যেভাবে দেন না কেন তাতেই আপনার কাজ হবে। পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে তা দিয়ে সেঁক দিতে পারেন। অপরদিকে, ঠান্ডা পানি নিয়ে পরিষ্কার কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে তা দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।

See also  আম খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা, সঠিক সময় কি?

২) লবণ পানি

দাঁতের মাড়ি ব্যথা কমানোর আরেকটি দারুণ ও কার্যকর উপায় হল লবণ পানি। অল্প গরম পানিতে এক চিমটি লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ মুখে রেখে দিন। এরপর কুলি করে ফেলুন। এতে আরাম পাবেন সাথে আপনার ব্যথাও কমে যাবে। এটা প্রতিদিন ৩ বেলাই করুন ব্যথা না কমা পর্যন্ত।

৩) হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড

হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মাড়িতে ব্যবহার করলে থাকা সমস্ত ক্ষতিকর জীবাণুকে মেরে ফেলে। প্রথমে পানিতে পরিমাণমত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড মিশিয়ে নিন। তারপর তা মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে পরে কুলি করে ফেলুন। দেখবেন মাড়ির ব্যথা কমে গেছে। এটি দাঁতের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।

৪) গ্রিন টি

গ্রিন টি অথবা ব্ল্যাক টি এর টি ব্যাগ নিয়ে গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। তারপর কিছুটা ঠান্ডা করে নিন। এরপর টি ব্যাগ ঠান্ডা হলে ব্যাগটি আক্রান্ত মাড়িতে লাগিয়ে রাখুন। ফলে মাড়ির ব্যথা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে।

৫) কাঁচা হলুদ

প্রথমে কাঁচা হলুদ নিয়ে পেস্ট বানাতে হবে। সামান্য পরিমাণ পানি মিশ্রিত করুন। এরপর মিশ্রণটি আক্রান্ত মাড়িতে বেশ কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। এতে আপনি আরাম পাবেন ও  সাথে আপনার ব্যথাও কমতে শুরু করবে। এভাবে প্রতিদিন লাগিয়ে যাবেন যতদিন না আপনার মাড়ির ব্যথা কমে।

আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমানোর  উপায়:

আমাদের সকলেরই আক্কেল দাঁত ওঠার সময় ব্যথা ও যন্ত্রণা হয়ে থাকে। আবার অনেকে আক্কেল দাঁত ওঠার ব্যথা সহ্য করতে না পেরে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন।

অনেকে ব্যথা বা যন্ত্রণা সহ্য করতে না অস্ত্রোপচারও করে ফেলেন। তবে ঘরোয়া উপায়ে আক্কেল দাঁতের ব্যথা কিছুটা কমানো সম্ভব। চলেন উপায়গুলো জেনে নিইঃ

  1. আপনার ঘরে যদি  ভিনেগার থাকে তাহলে এক চা চামচ ভিনেগারের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে নিন। এর মধ্যে একটি তুলো ভিজিয়ে নিয়ে আক্কেল মাড়ির স্থানে দাঁত দিয়ে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখুন। এতে আপনার ব্যথা দ্রুত কমে যাবে।
  2. আক্কেল দাঁতের ব্যথা কমাতে বেকিং সোডাও দুর্দান্ত উপকারী। এর জন্য একটি তুলার বল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর বেকিং সোডা তুলার বলের সাথে মাখিয়ে তুুলা আক্কেল দাঁতের উপরে রাখুন। এতে আপনার ব্যথা কমতে শুরু করবে।
See also  হেঁচকি কেন হয় এবং বন্ধ করার সহজ উপায় কি?

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঔষুধঃ

ঘরোয়া  উপায়গুলো অবলম্বন করার পরও যদি আপনার ব্যথা না কমে তাহলে আপনি ব্যথানাশক ট্যাবলেট বা ঔষুধ খেতে হবে। তবে ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ উচিত।

এরপরও যদি ব্যথা না কমে তাহলে আপনি এন্টিবায়োটিক ঔষুধ খেতে হতে পারেন এবং সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।

সাধারণত দাঁতের ব্যথায় ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম (ডাইভন), ইবুপ্রোফেন, ইত্যাদি ব্যথানাশক ওষুধ খেতে বলা হয়। এছাড়া এন্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে এমোক্সিসিলিন এবং অগমেনটিন ইত্যাদি ঔষুধ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

পরিশেষে:

দাঁত ব্যথা হলে আপনার প্রচন্ড যন্ত্রণা হবল এটাই বাস্তবিক। তাই অধৈর্য না হয়ে ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করুন।দাঁত ব্যথা হলে আপনি চাইলেও শক্ত খাবার খেতে পারবেন না তাই নরম খাবার খাওয়াই ভালো।

এছাড়া ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম ইত্যাদি জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। আর অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষুধ সেবন করা উচিত। তাই দাঁতের ব্যথায় অধৈর্য্য না হয়ে, বরং ঘরোয়া উপায়গুলো অবলম্বন করুন এবং সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *