এলার্জি, ব্রণ, চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার পদ্ধতি
একটি ঔষধি গাছ।ইহার উৎপত্তি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকায় এবং এর আদিনিবাস মিয়ানমারে।এটি একটি বর্ষজীবী ও চিরহরিৎ বৃক্ষ।ইহার বৈজ্ঞানিক এবং ইংরেজি নাম হচ্ছে AZADIRACHTA INDICA. এটি Plantae জগতের বৃক্ষ।এটি Magnoliophyta বিভাগ, Sapindales বর্গ, Meliaceae পরিবার, Azadirachta গণ, AZADIRACHTA INDICA প্রজাতির বৃক্ষ।
এখানের আলোচনার মূল উৎস হলো নিম পাতার উপকারিতা। আলোচনা সরূপঃ
চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার
চুলের জন্য নিম পাতা এক অপরিসীম ভুমিকা পালন করে।যেমন, চুল পড়া কমানোর জন্য বিশ্বে নিম পাতার প্রচলন বিশাল।নিম পাতা চুলের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং খুশকি মুক্ত করে।মাথায় উকুনের মুক্তিতে নিম পাতার গুরুত্ব অপরিহার্য। চুলের সকল সমস্যার জন্য নিম পাতার গুরুত্ব রয়েছে কেননা বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই ঔষধি গাছের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। নিম পাতা প্রতিদিনই ব্যবহার করা যায়।
তাছাড়া সাবরা পৃথিবীতে চুল পড়ার প্রধান কারন হচ্ছে খুশকি।এই সমস্যার জন্য মাথায় টাক হয়।হইার জন্যও নিম পাতার গুরুত্ব অপরিহার্য।
খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিম পাতাকে ভালো করে বেঁটে কিংবা গুড়া করার যন্ত্র দিয়ে দাঁত মাজার ঔষধের মতো করতে হবে। এই ঔষধের মতো করে মাথায় ভালো করে দিতে হবে এবং ৩০ মিনিট পর্যন্ত মাথায় রাখতে হবে। তাহলে নিম পাতা ব্যবহারে খুশকি থেকে মুক্তির জন্য উপকার পেতে পারেন। উকুন দূরীকরণ করতে নিম পাতার গুরুত্ব অপরিহার্য। উকুন মানুষের মাথা থেকে অতিরিক্ত রক্ত শোষণ করে চুলকানির সৃষ্টি করে। যার জন্যে মাথার ত্বকে চর্মরোগের সৃষ্টি হয়।
চুলায় (২৫-৩০) টি নিম পাতা ও হাফ কেজি নারিকেল তেল মিশ্রণ করে নিম তেল তৈরি করতে হবে। এই তেল রাতে ঘুমানোর আগে চুলে দিতে হবে এবং পরদিন শ্যাম্পু দিয়ে পুড়ো মাথার চুল দূতে হবে।সপ্তাহে ২-৩ দিন দেওয়াতে উকুন থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
নিম পাতার পাউডার তৈরি ও ব্যবহার
নিম পাতার পাউডার নিমের পাতা বাটার মতো কার্যকর। নিম পাতার পাউডারের রয়েছে কয়েকটি কার্যকরী উপাদান যেগুলো আমাদের নানা রোগের মহা ঔষধ। সেই উপাদান গুলো হলোঃ
এন্টিব্যাকটেরিয়াল
এন্টিসেপটিক
এন্টিমাক্রোবিয়াল
এন্টিইনফ্লামেটরি প্রোপার্টিজ
বর্তমানে দাঁতের যত্নে নিম পাতার পাউডার সারাবিশ্বে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং দাঁতের যত্নে নিম পাতার পাউডার এটা বহু আগে থেকে মানুষ ব্যবহার করছে তবে বর্তমানে এটার ব্যবহার সর্বাধিক। আপনার মুখের দূর গন্ধ, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের একমাত্র মহা ঔষধ হচ্ছে নিম পাউডার। গ্রামের মানুষেরা নিম পাতাকে ভালো করে শুকায় তারপর সেই শুকনো পাতাকে পুড়িয়ে দাঁত মাজার জন্য নিমের পাউডার তৈরি করে।যা দ্বারা তাদের কোনো খরচ ছাড়াই দাঁতের যত্ন নিতে সক্ষম হচ্ছে।
ব্রণের জন্য নিম পাতার ব্যবহার
ব্রণের জন্য অন্যান্য ঔষধের তুলনায় নিম পাতার কার্যকারিতা বিশাল।বর্তমানের মানুষ সবাই রূপচর্চায় পারদর্শী এবং সৌন্দর্যের পূজারী। আর এই সৌন্দর্য নষ্ট করার প্রধান কারনে আছে ব্রণ। যা মানুষের মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে।এই সমস্যা সমাধানের জন্য বর্তমানে মানুষ অনেক ঔষধ এবং কসমেটিকস সামগ্রী ব্যবহার করে। এই ব্রণ সমস্যা সমাধানের একমাত্র মহা ঔষধ হচ্ছে নিম পাতা। নিম পাতা ব্যবহারে ব্রণ এবং ব্রণের দাগ খুব তাড়াতাড়ি নিঃশেষ হয়ে যায়। নিম পাতা ভালো করে সিদ্ধ করে পেস্ট করে নিন এবং পেস্ট ভালো ভাবে মুখে মালিশ করে ১০-১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে সম্পূর্ণ মুখ ধুয়ে নিন। এই ভাবে কয়েকদিন ব্যবহারের পর আপনি দেখবেন আপনার ব্রণ ও ব্রণের দাগ আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এবং একসময় সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে।
নিম পাতার উপকারিতা এলার্জি
সাধারণ মানুষ এলার্জি বলতে চুলকানি কে বুঝে।কিন্তু বর্তমানে হাঁচি-কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি ও এনার্জি জনিত রোগের মধ্যে পড়ে।বর্তমানে অনেক ডাক্তার এলার্জির জন্য অনেক খাবার খেতে নিষেধ করেন সেগুলো হলো, কালো বেগুন, ইলিশ, চিংড়ি, হাঁসের মাংস ও ডিম, গরুর মাংস ইত্যাদি। এলার্জি সমস্যা প্রথম ধাপ হলো ত্বক থেকে শুরু করে পুড়া শরীর চুলকানো এবং রক্তের মতো লাল হয়ে জমাট বেঁধে যাওয়া।নিম পাতার গুড়া আপনি নিয়মিত এক মাস তিনবেলা করে খেলে আপনার এলার্জির সমস্যা অনেক কমে যাবে।
নিম পাতার অপকারিতা
নিম পাতা সবসময় উপকারী সেটা ভাবাটা ও অনেকটা বোকামি। অনেক সময় নিম পাতা দৈনন্দিন জীবনে অনেক ক্ষতি ও করে থাকে।তবে অপকারিতা থেকে নিম পাতার উপকারিতা অনেক বেশি।যেমন, আপনারা হয়তো জানেন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কিছু ব্যবহার করাটাই মানুষের জন্য ক্ষতির ইঙ্গিত নিয়ে আসে।পৃথিবীতে এমন কোন জিনিস নেই যে তার অপকারিতার দিক নেই। প্রতিটা জিনিসের অপকারিতা আছে।সেজন্য অনেক সময় নিম পাতার পরিমাণ বেশি হওয়ার জন্য মানুষ নানাধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়।আপনার মুখে ব্রণ আপনি পরিমাণ মতো না ব্যবহার করলে আপনার মুখের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রতিটি উপকারী দিকগুলোতেও এমন হবে।সুতরাং নিম পাতার অপকারিতা রয়েছে।
উপরের আলোচিত সকল বিষয় থেকে আমরা বুঝতে পেরেছি যে, নিম পাতার ব্যবহার, গুনাগুন, উপকারিতা অপরিহার্য। নিম পাতা মানুষের হাজারো ঔষধের মহা-ঔষধ।

Bachelor of Business Administration,
East West University