ফুসফুস ভালো রাখার উপায়

ফুসফুস ভালো ও পরিষ্কার রাখার উপায় (খাবার, ব্যায়াম)

আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ  অঙ্গ হচ্ছে ফুসফুস। এর মাধ্যমে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকি। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ অঙ্গটি বাতাস থেকে বিভিন্ন দূষিত উপাদান গ্রহণ করে থাকে। এর ফলে অনেকেই  অ্যাজমার সমস্যায় ভোগেন। তাই ফুসফুসকে ভালো ও সতেজ রাখতে সবসময় সতর্কতা থাকা দরকার।

তাই আজকের এই আর্টিকেলে, ১১টি ফুসফুস ভালো রাখার উপায় নিয়ে আলোকপাত করবো। আশা করি, শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। তাহলে শুরু যাক-

১. কাজু, আখরোট, পেস্তা, চিনাবাদাম এবং  মিষ্টি কুমড়ার বীজ ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। তাছাড়া খনিজ লবণ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এসব খাবার ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ এবং প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে।

২. মধুতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল ও প্রদাহনাশক ক্ষমতা রয়েছে, যা ফুসফুস পরিষ্কার করে। তাই ফুসফুসের উপকারের জন্য প্রতিদিন এক চা চামচ মধু খাওয়া উত্তম।

৩. ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার বেশ কার্যকরী। বিশেষ করে ভিটামিন ডি’র অভাবে শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এর মূল উৎস সূর্য। এছাড়াও দুধ, ডিম, দই, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে।

৪. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় তুলসী পাতায়। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফুসফুস সুরক্ষায় খুবই কার্যকর। তুলসী পাতা বাতাসে থাকা ধূলিকণা শোষণ করতে পারে। তাই শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর করতে তুলসীপাতার রস বা পাতা পানিতে ফুটিয়ে পান করুন এতে শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর হবে। যার ফলে ফুসফুস ভালো থাকবে।

৫. ফুসফুস ভালো রাখতে কালোজিরা অনেক ভালো কাজ করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শ্বাসনালির প্রদাহ রোধ করে। প্রতিদিন আধা চা চামচ কালোজিরার গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে তাই ফুসফুস ভালো রাখতে প্রতিদিন আধা চা চামচ কালোজিরার গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খান।

৬. ফুসফুস ভাল রাখতে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। ভিটামিন সি ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করে। শ্বাসযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ এবং শ্বাসনালির জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। লেবু, আমলকি, কমলা, আপেল, পেয়ারা ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়।

৭. রসুনে প্রচুর পরিমাণে সেলিনিয়াম ও অ্যালিসিন রয়েছে। ফুসফুস ও শ্বাসনালি ভালো রাখতে এ দুটি প্রাকৃতিক উপাদান সাহায্য করে। তাছাড়া ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন ধরে রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে।

See also  এলার্জি, ব্রণ, চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা ও ব্যবহার পদ্ধতি

৮. ফুসফুস ভাল রাখতে অবশ্যই শারীরিক চর্চা করতে হবে। শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি ব্যায়াম করলে আপনার ফুসফুস ভাল থাকবে। এজন্য প্রতিদিন এরোবিক্স, ইয়োগা বা কার্ডিও এক্সারসাইজ করতে হবে।

১০. হলুদে অনেক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কারকিউমিন থাকে। যা ফুসফুসকে দূষিত পদার্থের প্রভাব থেকে সুরক্ষা করে থাকে। যদি সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয় তাহলে কাঁচা হলুদের রস মাখন বা ঘির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ভালো কাজ করে।

১১. সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ রাখুন।

ফুসফুস ভাল রাখতে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিতঃ

স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডটকম জানিয়েছে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিছু খাবার থাকলে যেগুলো আপনার ফুসফুসকে ভাল রাখতে সাহায্যে করে।  নিম্নে খাবারের তালিকা সম্পর্কে বলা হলঃ

১. আপেল 

আপেল খাওয়া ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় বলা হয়, সপ্তাহে যারা দুটি থেকে পাঁচটি আপেল খায়, তাদের অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৩২ ভাগ কমে যায়। আপেল খেলে প্রচুর ফ্লাবোনয়েড পাওয়া যায়। যা আপনার শ্বাস নেওয়ার পথকে পরিষ্কার রাখে এবং ফুসফুসকে ভালো রাখে।   

২. গাজর

গাজর বেটা ক্যারোটিন এবং অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্টের জন্য গাজর প্রসিদ্ধ। বেটা ক্যারোটিন আপনার শরীরে গিয়ে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে গাজর একটি চমৎকার খাবার ফুসফুস ভাল রাখার জন্য।

৩. কফি

কতটুকু পরিমাণ কফি পান করা আপনার শরীরের জন্য ভালো- এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে ফুসফুস ভালো রাখতে কফি সাহায্য করে, বিশেষ করে ব্ল্যাক কফি। কফি পান করার প্রায় চার ঘণ্টা পর শ্বাসতন্ত্রের কার্যক্রম আরো ভালো বৃদ্ধি পায় । তাই ফুসফুস সুরক্ষিত রাখতে হলে আপনি কফি পান করতে পারেন।

৪. অ্যাভোকাডো

অ্যাভোকাডোর মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। রোগ নিরাময়কারী গুণ রয়েছে এর মধ্যে।  ফ্রি রেডিকেলের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে এটি আপনার শরীরকে সুরক্ষিত রাখে। তাই ফুসফুসকে ভালো রাখতে বেশ উপকারী খাবার হল  অ্যাভোকাডো।

ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়ামঃ

ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা উচিত। বিশেষ করে, হাঁপানি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের রোগীদের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনেক উপকারী। চলেন তাহলে কয়েকটি ব্যায়াম সম্পর্কে জেনে নিন:

See also  থানকুনি পাতা চাষ পদ্ধতি, উপকারিতা, অপকারিতা ও রেসিপি

১. বুকে বালিশ দিয়ে উপুড় হয়ে বা প্রোন পজিশন হয়ে শুয়ে থাকুন। জোরে জোরে শ্বাস নিন। ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে বারবার শ্বাস নিন আর ছাড়ুন।এটি আপনার ফুসফুস থেকে রক্তে অক্সিজেন বিনিময়ে সহায়তা করবে।

২. নাক দিয়ে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিন। ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। এবার মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে ১০ বার করুন। শেষবার নাকে রুমাল বা টিস্যু পেপার চেপে ধরে জোরে কাশি দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। পুনরায় ব্যায়ামটি আরও একবার একই নিয়মে করুন। এটি করলে, আপনার ফুসফুসে অক্সিজেনের রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করবে।

৩. দুই হাত সোজা করে পদ্মাসনে বসুন শরীর অক্সিজেন সরবরাহ বাড়াতে। এবার মেরুদণ্ড সোজা রেখে নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন। তারপর ডান দিকের নাক এক আঙুলে চেপে ধরে বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস নিন।

ধুমপায়ীদের ফুসফুস ভালো রাখার উপায়ঃ

ফুসফুসে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দূষণ ও ধূমপানের কারণে ময়লা জমে। এ কারণে অনেকে শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগেন। বর্তমানে ছোট থেকে বড় সবাই শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে থাকেন। ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ফুসফুসের সমস্যা দেখা দেয়।

তবে আপনি  কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে ফুসফুস পরিষ্কার রাখা সম্ভব। যার ফলে মারাত্মক ব্যাধির ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে। নিম্নে ধুমপায়ীদের ফুসফুস ভালো রাখার উপায়গুলা বলা হলঃ

ভাঁপ নিন

আপনাকে নিয়মিত গরম পানির ভাঁপ নিতে হবে। যখন আপনি গরম ভাঁপ নেবেন; তখন ফুসফুসের ড্রেনে জমে থাকা শ্লেষ্মা গলে যাবে। তখন আপনি ভালোভাবে নিশ্বাস নিতে পারবেন। ‘জার্নাল অব পালমোনারি অ্যান্ড রেসপিরেটরি মেডিসিনে’ প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়ে যে,  ফুসফুস ভালো রাখতে গরম পানির ভাঁপ অনেক কার্যকরী।

গবেষণাটি করা হয় ১৬ জনের উপর; যারা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) আক্রান্ত ছিলেন। যার ফলে তাঁরা ঠিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না। গবেষকরা ১৬ জনের উপর পরীক্ষা করার আগে তাদের হার্ট রেট ও রেসপিরেটরি রেটের পরিমাণ অনেক কম দেখতে পান। গবেষণা চলাকালীন সময়ে রোগীরা নিয়মিত গরম পানির ভাঁপ নিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে দেখা যায়, তাদের রেসপিরেটরি রেটের পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে অবশ্যই নিয়মিত ভাঁপ নিতে পারেন।

See also  ১০টি গর্ভবতী হওয়ার প্রধান লক্ষণ গুলো জানুন ঘরোয়া উপায়ে!

গ্রিন টি

শারীরিক সুস্থতায় গ্রিন টি অনেক কার্যকারী। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ অনেক রয়েছে। ফুসফুস সংক্রমণের বিরুদ্ধে যা লড়াই করে। ফুসফুসের টিস্যুগুলো ধূমপানের কারণে ট্যিসুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। গ্রিন টি’তে থাকা উপাদানগুলো ওই ক্ষতির হাত থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করে।

গ্রিন টি’র সক্ষমতার কথা দ্য জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় । তাঁরা এক হাজার প্রাপ্তবয়স্ক কোরিয়ানদের উপর গবেষণাটি চালায়। দিনে দুইবার নিয়মিতভাবে তাঁরা গ্রিন টি পান করতেন। এরপর গবেষকরা দেখতে পান, গ্রিন টি না খাওয়া ব্যক্তিদের ফুসফুসের তুলনায় যারা নিয়মিত গ্রিনটি খেয়েছেন তাদের ফুসফুস অনেক বেশি কার্যকর।

মধু

মধু কাশি কমাতে বেশ উপকারী।  এটি ফুসফুসের জমানো শ্লেষ্মা দূর করতেসাহায্য করে। কুসুম গরম পানিতে মধু মিশিয়ে খেলে কাশির প্রকোপ কমাতে কুসুম গরম পানিতে মধু খাওয়া উচিত। সংক্রমণ রোধেও মধুতে থাকা জীবাণুনাশক উপাদানগুলো সাহায্য করে।

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার

শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভব করলে অবশ্যই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি খাবার খাওয়া উচিত। এতে অনেকটা উপকার পাবেন। এজন্য আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন, সেগুলো হলো- হলুদ, সবুজ শাক-সবজি, চেরি, ব্লুবেরি, জলপাই, আখরোট, মটরশুটি ও মসুর ডাল ইত্যাদি।

গাজর

শুধু ফুসফুস নয়, শরীরের নানা দূষিত পদার্থকে বের করতে গাজরের রস কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। শরীরকে চাঙা রাখতে প্রতিদিন অল্প পরিমাণ গাজরের রস খাওয়া উচিত। তাছাড়া আপনি চাইলে গাজরের সঙ্গে আপেল বা আঙুরের রস খেলে অনেক উপকার পাবেন।

আনারস

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি- এই দুটি উপাদান প্রাকৃতিকভাবেই ফুসফুস পরিষ্কার করে। তাছাড়া আনারস বা নানা ধরনের বেরি, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের রসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে। যা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।

পরিশেষে, ফুসফুস আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকলে হলে সঠিকভাবে অবশ্যই ফুসফুসের যত্ন নিবে হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *