১০টি বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
ব্যবসা হল সেই কাজ যেখানে একজন ব্যাক্তি বা একটি সংগঠন কোন পণ্য বা সেবার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে থাকে। কেউ যখন ব্যবসা করার চিন্তা করেন তখন তাঁকে সেই ব্যবসার অদ্যপান্ত জেনে তারপর কাজে নামতে হয়।
স্থান, কাল, পাত্র ভেদে ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই ব্যবসা শুরু করার পূর্বে কোন কোন ব্যবসার কি অবস্থা তা জেনে নেয়া ভাল। এতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়। এই আর্টিকেলে আমরা জানব বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ১০টি ব্যবসা সম্পর্কে। তবে তার আগে ব্যবসা শুরুর পূর্বে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা সংক্ষেপে বলা হল।
ব্যবসা শুরুর পূর্বে লক্ষণীয়ঃ
- আপনি যে স্থান ও যে ধরনের মানুষকে টার্গেট করে আপনার ব্যবসার চিন্তা করছেন তা নিয়ে জানুন।
- যে পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন তার চাহিদা সম্পর্কে বুঝার চেষ্টা করুন।
- সম্ভব হলে অন্যদের চেয়ে ভিন্নভাবে বা আরও আধুনিক উপায়ে আপনার ব্যবসাকে উপস্থাপন করুন।
- আপনার পুঁজি অনুযায়ী লাভের অঙ্ক ঠিক করুন। পুঁজি অল্প হলে যেমন ঝুঁকি কম তেমনি লাভও কম। তবে প্রাথমিক অবস্থায় অধিক লাভের চেয়ে বাজারে টিকে থাকার চেষ্টা করাই উত্তম এবং অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা উচিত।
- ব্যবসা শুরুর পূর্বে সঠিক পরিকল্পনা, দৃঢ় মনোবল, সততা, ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা থাকতে হবে।
যে ১০টি ব্যবসা বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক
নিচে বাছাইকৃত বর্তমানের সবচেয়ে লাভজনক ১০টি ব্যবসা নিয়ে বলা হল। আপনি এখান থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন একটিকে বাছাই করে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শুরু করতে পারেন।
আপনার ব্যবসা শুধু অনলাইন ভিত্তিকও হতে পারে আবার শুধু অফলাইনে হতে পারে। তবে বর্তমানের ডিজিটাল যুগে দুই মাধ্যমেই কাজ চালানো উচিত।
১। রেডি খাবার ব্যবসাঃ
নাগরিক জীবনে মানুষ এখন অনেক ব্যস্ত। নারী-পুরুষ উভয়ই বাহিরে কাজে ব্যস্ত থাকায় হরেকরকম রান্নার আয়োজন কষ্টসাধ্য। এক্ষেত্রে যারা বিভিন্ন ধরনের খাবারের ব্যবসা অনলাইনে ও অফলাইনে করছেন তাদের কাস্টমারের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
আপনি যদি রান্না করতে পছন্দ করেন তাহলে আপনার রান্নাঘরকে ব্যবসার কাজে লাগাতে পারেন। ছোট পরিসরে শুরু করে পরবর্তীতে চাইলে কোন বড় জায়গা ভাড়া নিয়ে খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্টে পরিনত করতে পারেন।
খাবারের মধ্যে রেগুলার খাবারের পাশাপাশি কোন স্পেশাল আইটেম, বেকারি, কেক, মিষ্টি, আচার ইত্যাদির যে কোন একটি বা একাধিক আইটেম নিয়ে কাজ করতে পারেন।
২। অরগানিক ফারমিংঃ
মানুষ এখন যথেষ্ট স্বাস্থ্যসচেতন। চারদিকে ভেজালের ভিড়ে মানুষ অরগানিক খাবার বা যেকোনো দ্রব্য পেলে তা লুফে নেয়। আপনি আপনার বাসার ছাদে বা ছোট কোন জায়গায় এরকম জিনিসের উৎপাদন করে তা বিক্রি করতে পারেন।
এসবের মধ্যে খাবার, বড়দের প্রসাধনী, ছোটদের প্রসাধনী, ভেসজ দ্রব্য ইত্যাদি হতে পারে। তবে এসব ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট জ্ঞানের অধিকারি হতে হয়। আপনি চাইলে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বা কোর্স করে সঠিক জ্ঞান অর্জন করে এই খাতে ব্যবসার পুঁজি দিতে পারেন।
৩। পণ্য ডেলিভারিঃ
বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে ডেলিভারি সিস্টেমেরও চাহিদা বাড়ছে। ভোক্তা ও উদ্যোক্তার মাঝখানে সেতু তৈরি করছে এসব ডেলিভারি কোম্পানিগুলো।
আপনার একটি গাড়ি বা মোটরসাইকেল বা কমপক্ষে একটি সাইকেল থাকলে তা দিয়েই প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করে দিতে পারেন। পরবর্তীতে কয়েকজনের একটি টিম গঠন করে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই ডেলিভারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।
৪। এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা
আমাদের দেশের এমন অনেক সম্ভাবনাময় খাত আছে যেগুলোর চাহিদা বাইরের দেশে আছে। আবার বাইরের দেশের অনেক পণ্য আছে যা আমাদের দেশে চাহিদা বিপুল।
আপনি চাইলে বিদেশ থেকে কিছু পণ্য যেমন প্রসাধনী, ব্যাগ, ইলেক্ট্রনিক জিনিস বা বিভিন্ন জিনিস তৈরির পার্টস আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রি করতে পারেন। আবার দেশি বিভিন্ন জিনিস যার চাহিদা বিদেশে রয়েছে তা দেশের পাইকারি বাজার থেকে ক্রয় করে বিদেশে বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারেন।
এক্ষেত্রে ভাল সোর্স খোঁজ করতে হবে। যা নিয়ে কাজ করবেন তার বিস্তারিত জ্ঞান রাখতে হবে। এই ব্যবসা অনলাইন ও অফলাইন দুই ক্ষেত্রেই চালিয়ে নিতে হবে।
৫। ফ্যাশন সংক্রান্ত ব্যবসা
বর্তমানে মানুষ অনেক ফ্যাশন সচেতন। পোশাক-আশাক থেকে শুরু করে, ঘরের আসবাব, বিছানা চাদর, পর্দা, রান্নাঘরের সামগ্রী, নিজের ব্যবহার্য পণ্য ইত্যাদি প্রতিটি জিনিসে মানুষ এখন ফ্যাশনেবল জিনিস পেলে অগ্রাধিকার দেয় বেশি।
আপনার অনালাইন ও অফলাইন ব্যবসায় এই দিকে নজর দিয়ে কিছুটা আনকমন ডিজাইনের জিনিস আনতে পারলে বিক্রি বেশি হবে।
৬। সৌখিন জিনিষের ব্যবসা
বর্তমানে মানুষ তার ঘরে নানা রকম সৌখিন জিনিস ব্যবহার বা সাজিয়ে রাখে। বিভিন্ন ধরনের শোপিস, আসবাবপত্র, পোষা প্রাণী বা পাখি, এক্যুরিয়াম ইত্যাদি জিনিসের চাহিদাও তাই অনেক। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এসব জিনিসের চাহিদা বেশি।
আপনি চাইলে নিজে এইসব বস্তু তৈরি করতে পারেন বা পাইকারি বিক্রেতাদের থেকে ক্রয় করে অনলাইনে বা আপনার দোকানে ব্যবসা করতে পারেন।
৭। ভেজালমুক্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য হোম ডেলিভারি ব্যবসা
বর্তমানে ব্যস্ততার কারনে বাজারে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার কেনা কষ্টকর। আপনি যদি এই সমস্যার সমাধানের লক্ষে মানুষের ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দেয়ার কাজ করতে পারেন তাহলে এটিই হতে পারে আপনার আয়ের উৎস।
এক্ষেত্রে আপনি অনলাইনে আপনার কাছের এলাকার মানুষকে সেবা দিয়ে শুরু করতে পারেন। একই জেলার ভিতরে এই ধরনের অনলাইন সেবা অনেক লাভজনক ব্যবসায় রুপান্তরিত হতে পারে। এই কাজে শতভাগ সততা ও সময়ানুবর্তীতা মেনে চলতে পারলে গ্রাহকের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে না।
৮। ফটোগ্রাফিঃ
বর্তমানে ফটোগ্রাফির অনেক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মডেলিং, নবজাতক বাচ্চাদের ছবি তোলা, পণ্যের ছবি তোলা ইত্যাদি কাজে এখন অনেকেই অভিজ্ঞ ফটোগ্রাফারের খোঁজ করেন।
আপনার যদি এরকম কাজ করতে ভাল লেগে থাকে তাহলে এই কাজটিই হতে পারে আপনার ব্যবসার ক্ষেত্র। প্রথমে আপনি নিজে এবং পরে এ সংক্রান্ত এজেন্সি চালু করার মাধ্যমে এই ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে কোর্স করতে হবে এবং গ্রাফিক ডিজাইন জানতে হবে।
৯। ব্লগিং
বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় অনলাইন ব্যবসা বা কাজ হল ব্লগিং। অর্থাৎ অনলাইনে লেখালেখির মাধ্যমে আয়। আপনার যদি লেখালেখি করতে ভাল লাগে বা ব্লগিং সম্পর্কে ভাল আইডিয়া নিতে পারেন তাহলে এই কাজটি করে আপনি ভাল পরিমানের আয় করতে পারবেন।
আপনি নিজে অনলাইনে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ওয়েবসাইট বা ব্লগসাইট খুলে সেখানে নিজে লিখতে পারেন। অথবা রাইটিং এজেন্সি খুলে তার মাধ্যমে রাইটার সরবরাহ করতে পারেন।
১০। ইউটিউবিং
অনলাইনে আয়ের বহুল জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হল ইউটিউবে ভিডিও দেয়ার মাধ্যমে আয়। আপনি যদি কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ হন তা ভিডিওর মাধ্যমে দর্শকের কাছে তুলে ধরুন ইউটিউবে। দর্শকের গ্রহণযোগ্যতার উপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে এই খাত থেকেই আপনার আয় আসতে থাকবে।
যেমন শিক্ষাদান, রান্না, কোন কিছু তৈরি বা সামাজিক ও বিনোদনমুলক কিছু যা মানুষ শিখতে চায় বা পছন্দ করে, এরকম ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে দিয়ে আয় করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ভাল মানের ক্যামেরা নিতে হবে, ভিডিও এডিটিং জানতে হবে এবং ইউটিউবের মাধ্যমে আয়ের ব্যাপারে বিশদ জানতে হবে।
শেষ কথা
ব্যবসায় যেমন লাভ করার সম্ভাবনা থাকে তেমনি ক্ষতির ঝুঁকিও থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে কৌশলী হলে এবং বিনিয়োগের আগে কিছু বিষয় জেনে তারপর কাজ শুরু করলে ঝুঁকি এড়িয়ে লাভ করা সম্ভব।
আমরা এখানে বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ১০টি ব্যবসা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। যেহেতু এটি ডিজিটাল যুগ তাই যেকোনো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আপনার অনলাইন ব্যবসা যুক্ত করতে পারলে তুলনামূলক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন আপনার পণ্য বা সেবা। আর বর্তমানে অনলাইনের ব্যবসাগুলোই বেশি লাভের মুখ দেখাচ্ছে।
তবে এর বাইরেও অনেক ধরনের ব্যবসা আছে যা হয়তো স্থান, কাল, পাত্র ভেদে লাভজনক বা অলাভজনক হতে পারে। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে শতভাগ সততা, পরিশ্রম ও ধৈর্য রাখতে পারলে ধীরে হলেও লাভ আসবেই।

Bachelor of Business Administration,
East West University