১০ হাজার টাকায় ব্যবসাঃ ২৮টি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া
ব্যবসা করার জন্য প্রথম ও প্রধান মাথাব্যথা হল মূলধন কত বা কত টাকা দিয়ে শুরু করছি। আপনি যদি অল্প টাকায় শুরু করেন সেক্ষেত্রে লাভ অল্প হলেও ঝুঁকি কম। অপরদিকে বেশি টাকা মূলধন হলে লাভও বেশি আবার ঝুঁকিও বেশি।
আপনার হাতে টাকার পরিমানের উপর নির্ভর করে আপনি কেমন ব্যবসায় যেতে পারেন- বড় পরিসরে নাকি ছোট পরিসরে। সাধারণত একজন নতুন ব্যবসায়ী যিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ, সবসময়ই চাইবেন অল্প টাকায় শুরু করতে।
এক্ষেত্রে এমন কিছু ব্যবসা আইডিয়া নিতে হবে যেখানে অল্প টাকায় শুরু করলেও ভবিষ্যতে ভাল মুনাফা অর্জন সম্ভব। সেই সাথে এই ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
আপনার হাতে যদি ১০,০০০ টাকা থেকে থাকে এবং তা দিয়ে ব্যবসা করতে চান, তাহলে ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়াগুলো একনজরে দেখে নিন। এগুলো থেকে আপনার পছন্দসই একটি বা একাধিক আইডিয়া কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন।
তবে মনে রাখবেন, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে শুধু টাকা খাটালেই হয়না। তার চেয়েও বেশি দরকার সেই ব্যবসা সম্পর্কিত জ্ঞান, দক্ষতা, উদ্ভাবনীশক্তি, সৃজনশীলতা এবং কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য।
১০ হাজার টাকায় সেরা ব্যবসা আইডিয়া
সব সময় মনে রাখবেন, আপনি যে বিষয়ে আগ্রহ পান, আপনার ভাল লাগে বা যে বিষয়ে আপনি দক্ষ সেটি নিয়েই কাজ করবেন। কারন ব্যবসায় ধৈর্য অনেক দরকারি। তাই যে বিষয় ভাল লাগে না তা নিয়ে কাজ করলে একসময় আপনার ধৈর্য চলে যেতে পারে।
এখানে ১০ হাজার টাকায় ব্যবসার আসাধারন ২৮টি আইডিয়া নিয়ে বলা হল। আপনার যদি এগুলোর কোনটিতে আগ্রহ থেকে থাকে তাহলে তা নিয়ে কাজ করতে পারেন।
১। খাবার ব্যবসা
দুনিয়া যত আধুনিক হচ্ছে মানুষ তত ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। আর ব্যস্ততার কারনেই হোক বা শখে, খাবার কিনে খাওয়া হয় কম বেশি সবার। একসময় পাড়ার চায়ের দোকান থেকে বড় রেস্টুরেন্টে খাবার ব্যবসা চলত। আর এখন সেই সাথে যুক্ত হয়েছে অনলাইনে খাবার ব্যবসা।
ফাস্টফুড, রেগুলার সকাল থেকে রাতের খাবারের ব্যবস্থা, আচার, মসলা, ফ্রোজেন ফুড ইত্যাদি সহ নানান আইটেমের খাবারের চাহিদা আছে। এই ব্যবসায় অনেক বেশি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। আপনি যে ধরনের খাবার নিয়ে ব্যবসা করতে চান তা সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে, ক্রেতার চাহিদা বুঝতে হবে। সেই সাথে পরিচ্ছন্নতা ও সময়ানুবর্তিতার দিকে নজর রাখতে হবে।
অনালাইনে ব্যবসা করার জন্য একটি ভাল ক্যামেরা ও আপনার পরিচ্ছন্ন রান্নাঘরই যথেষ্ট। আর অফলাইনে ব্যবসা করতে হলে শুরুতে নিজের রান্নাঘর থেকে শুরু করুন, ধীরে ধীরে দোকান নিন গলির ভিতরে বা সুবিধামত। আপনি রান্না করতে না চাইলে কাউকে বেতন দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারেন।
অফলাইন বা অনলাইনেই হোক, শুরুতে পরিচিতি আসতে সময় লাগবে। আপনার সততা আপনার পরিচিতি এনে দিবে। ভবিষ্যতে বড় পরিসরে নিয়ে যেতে পারবেন এই ব্যবসা।
২। কাপড়ের ব্যবসা
বস্ত্র বা কাপড় মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি। পরিধানের জন্য, বাসাবাড়ির বিভিন্ন প্রয়োজনে বা শিল্প কারখানায়, কাপড়ের চাহিদা আছেই। বিভিন্ন ধরনের কাপড় নিয়ে ব্যবসা করা যায় এবং এটি খুবই লাভজনক। আপনি চাইলে সব কাপড় নিয়ে ব্যবসা করতে পারবেন না, তাহলে আপনাকে অনেক দিকে ও অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হবে, যা একজন বা একদল ব্যবসায়ীর পক্ষে অসম্ভব।
আপনার যদি কাপড় নিয়ে ব্যবসা করতে ভাল লাগে তাহলে এই খাতের যে দিকটি নিয়ে আগ্রহ পান বা যে জিনিসের চাহিদা বেশি তা নিয়ে শুরু করুন। মেয়েদের বা ছেলেদের পরিধেয়, বাচ্চাদের পরিধেয় ইত্যাদি নানান ক্যাটাগরির পরার কাপড়ের ব্যবসা করা যায়। বিছানা চাদর, কুশন, টেবিল-ম্যাট বা পর্দা ইত্যাদি ক্যাটাগরির কাপড়েরও অভাব নাই। আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আপনার জন্য সহজে বাজার ধরার জন্য সুবিধাজনক ক্যাটাগরি কোনটি।
কাপড়ের ব্যবসায় নামতে হলে ৫০০০-১০০০০ টাকা বিনিয়োগ করলেই যথেষ্ট। শুরুতে অনলাইনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে বিক্রি করুন। এক্ষেত্রে একটি ভাল ক্যামেরা, কিছু ভাল কন্টেন্ট ও আপনার সততাই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ফ্যাশনেবল, ইউনিক ও রুচিশীল পণ্য নিয়ে কাজ করতে পারলে এ খাতে লাভ উঠিয়ে আনা সময়ের ব্যাপার মাত্র। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিসরকে বড় করার পরিকল্পনা করতে পারবেন।
৩। ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা
অল্প পুঁজি দিয়ে বর্তমান সময়ে অন্যতম লাভজনক ব্যবসা হল ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে কাজ করা। ভ্রমনপিয়াসু মানুষ একটু সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ঘুরাঘুরির জন্য। এক্ষেত্রে তারা যদি ট্রেন, বাস বা প্লেনের টিকেট ঘর থেকেই বন্দোবস্ত করতে পারেন, নিশ্চয়ই স্টেশন বা এয়ারপোর্টে গিয়ে লাইন ধরতে যাবেন না।
মানুষের কাছে এই সুবিধা পৌঁছে দেয়াই হল ট্রাভেল এজেন্সির কাজ। আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই বিভিন্ন বাস, ট্রেন বা প্লেনের টিকেট বুক করতে পারবে। এছাড়া তাঁরা নিজেদের জন্য বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় অবস্থিত হোটেল, মোটেলে অবস্থানের জায়গা ভাড়া নিয়ে রাখতে পারবে।
এই কাজের জন্য আপনার একটি কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ এবং এই সংক্রান্ত কাজের জ্ঞান থাকতে হবে। সেই সাথে এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকা লাগবে।
৪। ব্লগিং
আপনি যদি লিখালিখি পছন্দ করেন আর আপনার একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকে, তাহলে ব্লগিং করে আয় করতে পারবেন। এজন্য দরকার একটি ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইট তৈরির জন্য আপনাকে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে নিতে হবে।
এছাড়া আপনি চাইলে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য রাইটার ভাড়া করতে পারেন। সেই রাইটারকে বেতনের বিনিময়ে লিখিয়ে নিয়ে আপনার সাইটের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
৫। ইউটিউব
ইউটিউবে চ্যানেল খুলে অনেকেই ভাল পরিমানে আয় করছে। আপনার যদি কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকে তাহলে সেই বিষয়টি কাজে লাগিয়ে ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে দিতে পারেন। দর্শকের সমাগম হলে সেই ভিউ-এর উপর নির্ভর করে আপনার আয় আসবে।
এক্ষেত্রে একটি ভাল ক্যামেরা, কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ থাকা লাগবে। সেই সাথে এসইও সম্পর্কেও ভাল জ্ঞান থাকা লাগবে।
৬। ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রিপেয়ারিং শপ
বর্তমানে মোবাইল ও ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ মোটামুটি সবার কাছেই আছে। এবং এই ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলো নিয়ে প্রায়ই নানান ঝামেলায় পড়েন ব্যবহারকারীরা। এজন্য তাঁরা কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস রিপেয়ারিং শপের সাহায্য নেন।
আপনি চাইলে এই কাজটিকে ব্যবসা হিসেবে নিতে পারেন। কোন একটি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই সংক্রান্ত কোর্স করে আপনি কাজটি শুরু করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে যদি দোকান নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে আপনার বাসা থেকেই চালু করুন। নিজের পরিচিতদের মধ্যে জানান আপনার সার্ভিস সম্পর্কে এবং লিফলেট ছাপিয়ে আপনার ব্যবসার প্রচারনা করুন। যেহেতু এই কাজের চাহিদা প্রচুর, আপনার সার্ভিস ভাল হলে অল্প সময়েই এটিকে লাভজনক ব্যবসায় পরিনত করতে পারবেন।
৭। মোবাইল রিচার্জ ও বিকাশ এজেন্ট
বর্তমানে মোবাইল রিচার্জ বা মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন- বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) এজেন্ট হিসেবে কাজ করে অনেকেই ভাল আয় করছেন। মোবাইল সবার কাছেই রয়ছে এবং মোটামুটি সবাই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে।
আপনি বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানির কাছে আবেদনের মাধ্যমে চুক্তি করে এই কাজটি করতে পারেন। মোবাইলের রিচার্জ কার্ড বিক্রি বা রিচার্জ ব্যবস্থা রেখে এবং ব্যাংকিং সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে আপনি এই কাজ করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে এজেন্ট হওয়া কোন ঝামেলার কাজ না। এছাড়া ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই কাজটি করতে পারেন।
৮। ক্লিনিং সার্ভিস
বর্তমানে মানুষ ব্যস্ত থাকে। অন্যদিকে সামাজিক স্ট্যাটাসের মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য বাসাবাড়ি বা অফিসে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে দক্ষ লোক বা এজেন্সি খোঁজা হয়। আপনি চাইলে এই কাজটিকে ব্যবসা হিসেবে নিতে পারেন।
অফিস বা বাসার সোফার গদি, কার্পেট পরিস্কারসহ নানান ধরনের ক্লিনিং সার্ভিসের কাজ করানো হয়। এছাড়া অনেকে লন্ড্রিতে কাপড় ধোওয়া ও ইস্ত্রি করার জন্য দেয়। আপনি চাইলে এর একটি বা দুইটি কাজই করতে পারেন।
একটি লন্ড্রি দোকান দিয়ে অথবা বাসায় বা অফিসে গিয়ে হোমসার্ভিস দেয়ার মাধ্যমে কাজটি শুরু করতে পারেন। বর্তমানে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পরিস্কারক যন্ত্র বের হয়েছে। আপনি ১০ হাজার এর মধ্যে যা সহজলভ্য প্রথমে তা দিয়ে কাজটি শুরু করে দিতে পারেন।
৯। ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি
অনলাইনে ব্যবসা বর্তমানে সর্বত্র চলছে। যেকোনো ব্যবসা সেটা ব্লগিং হোক, ইউটিউবিং হোক বা পণ্য বিক্রি হোক, তার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং খুবই দরকার। ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল প্রোমোশনের জন্য অনেকেই ডিজিটাল মারকেটিং এজেন্সির শরনাপন্ন হন। কারন এই কাজে দক্ষতা সবার থাকে না।
আপনার এই কাজে আগ্রহ থাকলে ঘরে বসেই কম্পিউটারের সাহায্যে এই কাজটি করতে পারেন। প্রথমে আপনাকে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করে নিতে হবে। তারপর প্রাথমিকভাবে ঘরে থেকে কাজ করতে পারেন। পরে কাজটির প্রসার করে অফিসে রুপান্তর করতে পারবেন। এজন্য আপনার ইন্টারনেট সংযোগ ও ব্যাংকে মাস্টারকার্ড থাকা জরুরি।
১০। ক্যাটারিং সার্ভিস
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ফলমূল বা সবজির সাহায্যে ক্যাটারিং-এর কাজ করা জিনিসের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। মানুষ এখন শখের বসে এসব জিনিস দিয়ে অনুষ্ঠান মঞ্চ সাজায় বা অতিথি আপ্যায়ন করে। এই কাজের পারিশ্রমিকও মানসম্মত।
আপনি চাইলে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে এগুলোর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। অথবা ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে ও অনুশীলনের মাধ্যমে এই খাতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। এরপর এর কাজ করলে আপনার ভাল আয় আসবে।
এই কাজের জন্য বিশেষ ছুরি, কাঁচি, কাঠি ইত্যাদির প্রয়োজন। এগুলো আপনাকে কিনে নিতে হবে।
১১। কাগজের ব্যাগ, প্যাকিং আইটেম
কাগজের শপিং ব্যাগ, ঠোঙ্গা ইত্যাদির চাহিদা বিভিন্ন দোকানদার ও ব্যবসায়ীর কাছে আছে। এছাড়া পণ্য প্যাকেটজাত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের (সাধারন থেকে সৌখিন) ও সাইজের প্যাকিং আইটেম দরকার হয়।
যেমন- কাগজের সাধারন ঠোঙ্গা, শপিং ব্যাগ, বক্স, পাটের থেকে তৈরি প্যাকেট, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বাবল র্যাপার, কুরিয়ার ব্যাগ, ককশিট ইত্যাদি নানা ধরনের আইটেম নিয়ে এই খাতে কাজ করা সম্ভব। এছাড়া এই ব্যবসায় ১০ হাজারের নিচে টাকা বিনিয়োগ করেই শুরু করা যাবে।
১২। টিউশন বা কোচিং
আপনি যদি শিক্ষকতা পছন্দ করেন কিন্তু এখনও শিক্ষার্থী তাহলে বয়সে ছোটদের পড়িয়ে আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। অবশ্য কাজটি আমাদের দেশে বিপুল জনপ্রিয় এবং সর্বজনবিদিত। আপনি আপনার ঘরের একটি রুমে একটি হোয়াইট বোর্ড টাঙিয়ে এবং কিছু মার্কার কলম কিনে শিক্ষকতা শুরু করতে পারেন।
১৩। অনলাইন শিক্ষকতা
আপনি যদি শিক্ষার্থীদের বসানোর কোন জায়গার ব্যবস্থা করতে না পারেন, বা আপানার সময়ের সাথে সামঞ্জস্য করতে না পারেন, তাহলে অনলাইনেই শিক্ষকতার কাজটি করতে পারেন।
ইউটিউবে টিউটোরিয়াল তৈরির মাধ্যমে, অথবা জুম মিটিং-এর মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষকতা করে আপনার আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন।
১৪। গয়না ব্যবসা
গয়নার চাহিদা যুগ যুগ ধরে। বর্তমানের ফ্যাশন সচেতন নারীরা ইউনিক ও কাস্টমাইজড গয়না পেলে সহজেই লুফে নেয়। এছাড়া বিভিন্ন উপলক্ষে মানুষ বিভিন্ন ধরনের গয়নার খোঁজ করে।
আপনি যদি গয়না তৈরি করতে পারদর্শী হন, তাহলে কিছু উপাদান পাইকারিতে কিনে গয়না তৈরি করুন। তারপর ফেসবুকে পেজের মাধ্যমে আপানার পণ্য বিক্রি করুন।
১৫। হস্তশিল্পের ব্যবসা
হস্তশিল্পের চাহিদা চিরন্তন। মানুষ তার আধুনিক বা সাধারন বাড়িতে ও অফিসে হস্তশিল্পজাত পণ্য দিয়ে সাজাতে পছন্দ করে। এছাড়াও নানা ধরনের পরিধেয় বস্তু, রান্নাঘরের সামগ্রী ইত্যাদিতেও হস্তশিল্পজাত দ্রব্যের চাহিদা আছে।
আপনি এই কাজে দক্ষ হয়ে থাকলে শুধু এই কাজটি দ্বারাই দেশে ও বিদেশে ব্যবসার প্রসার করতে পারবেন এবং ভাল উপার্জন করতে পারবেন।
১৬। দর্জির কাজ
মেয়েদের, ছেলেদের বা বাচ্চাদের জামাকাপড় সেলাই করে পরিধানের যোগ্য করার জন্য মানুষ দর্জিবাড়ি দৌড়ান। আপনি যদি এই কাজটি ভালবেসে থাকেন তাহলে এটির মাধ্যমে আয়ের পথ করতে পারবেন।
আপনি যদি এই কাজটি না জেনে থাকেন তাহলে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিতে হবে। প্রাথমিকভাবে একটি ভাল মানের সেলাই মেশিন কিনে কাজটি শুরু করতে পারেন। বিভিন্ন কাপড়, বিভিন্ন ডিজাইনে সেলাই করতে পারলে, দ্রুত এই কাজে সফলতা পাবেন।
১৭। মেকাপ আর্টিস্ট ও বিউটিশিয়ান এর কাজ
বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন অনুস্থানে মেয়েরা সুন্দর করে সেজে পরিপাটি হয়ে যেতে পছন্দ করেন। এই কাজ একজন বিউটিশিয়ানের মত দক্ষভাবে অন্যরা করতে পারেনা বিধায় অনেকেই মেকাপ আর্টিস্টের শরনাপন্ন হয়ে থাকেন।
এছাড়া ত্বকের ও চুলের যত্নে বিভিন্ন থেরাপি নিতেও মেয়েরা বিউটিশিয়ানের কাছে যান। আপনার এই কাজে আগ্রহ ও জ্ঞান থাকলে এই খাতে কিছু বিনিয়োগ করে একটি ছোট পার্লার দিতে পারেন।
১৮। বিভিন্ন জিনিসের কম্বো প্যাকেজ বিক্রি
বিভিন্ন জিনিসের কম্বো প্যাকেজ, মানে- ধরুন একটি শাড়ির সাথে মেলানো চুড়ি, জুতো, কানের দুল, গয়না, মাস্ক ইত্যাদি একসাথে বিক্রি করছেন। এরকম একসাথে মিলিয়ে কোন জিনিস বিক্রি হল কম্বো প্যাকেজ বিক্রি।
এটি পরিধেয় জিনিসের, রান্নাঘরের তৈজসপত্রের, কুশিকাজের উপাদানের, হাতের কাজের উপাদানের, পেইন্টিং/ ড্রয়িং এর উপাদানের সমষ্টি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে কম্বো হতে পারে।
আপনি এসব খুঁজে খুঁজে পাইকারি দোকান থেকে কিনে একটি প্যাকেজ তৈরি করে অনলাইনে বা নিজের শপে বিক্রি করতে পারেন।
১৯। ওয়েডিং প্ল্যানার, বিয়ের দরকারি জিনিসের ব্যবসা
বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানে মানুষ অনেক জাঁকজমক পছন্দ করেন। সবাই নানাভাবে ছবির মত করে সাজিয়ে তুলতে চান তাদের বিয়ের আসর।
এসব কাজে ওয়েডিং প্ল্যানার সংস্থাগুলোর ভাল চাহিদা রয়েছে। আপনি চাইলে কিছু আর্টিফিশিয়াল কার্পেট, ফুলের টব, কাগজের শোপিস ইত্যাদি জোগাড় করে এই কাজটি শুরু করতে পারেন।
এছাড়া বরের গাড়ি সাজানো, ঘর সাজানো, বরের শেরওয়ানি-পাগড়ি-জুতা, কনের গায়ে হলুদের গহনা, গায়ে হলুদের সঞ্জামাদি ইত্যাদি বিক্রি করেও ভাল আয় করতে পারেন।
২০। পোষা প্রাণী সংক্রান্ত সার্ভিস
অনেকেই এখন ঘরে কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, পাখি ইত্যাদি পালন করছে। শহরের বাসায় এগুলো পালন করতে গেলে অনেক যত্ন প্রয়োজন। বিশেষ করে বিদেশি প্রাণী বা পাখি পালনে বিশেষ যত্নের দরকার হয়।
এসব প্রানির জন্য খাবার, ঔষধ, থাকার জায়গাসহ নানান সৌখিন জিনিসের দরকার হয়। এই সমস্ত উপকরন নিয়ে ব্যবসা করলে ভাল আয় সম্ভব।
এছাড়া অনেক সময় এদের লালনপালনকারী বাইরে যাওয়ার সময় কারও দায়িত্বে রেখে যেতে চান। অনেকটা ডে-কেয়ার সেন্টারের মত। সেক্ষেত্রেও এসব প্রাণীর দায়িত্ব নেয়ার কাজটি করে ভাল আয় করা যায়।
২১। বই বিক্রয়
ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে বই পড়ার প্রবনতা আগের চেয়ে কমে গেলেও বই এর চাহিদা একেবারে কম নয়। আপনি যদি অনালাইনে বা আপনার দোকানে বই বিক্রি করতে পারেন তাহলে মোটামুটি ভাল আয় সম্ভব।
প্রকাশনী সংস্থাগুলোর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বই কিনে আনুন। তারপর বিক্রিত বই হতে কমিশন পাওয়ার মাধ্যমে আপনি উপার্জন করতে পারবেন।
২২। শোপিসের, সৌখিন জিনিসের ব্যবসা
বর্তমানে মানুষ অনেক সৌখিন। তাঁরা ঘর সাজাতে নিত্যনতুন জিনিস খুঁজে থাকে। এছাড়া এধরনের জিনিসের দামও অনেক হয়। তাই আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী উপাদান কিনে তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শোপিস তৈরি করতে পারেন।
আইস্ক্রিমের কাঠি, হার্ডবোর্ড, পাটের দড়ি, বোতল, পাখির পালক, পুতি, হোয়াইট সিমেন্ট, কাঁচের জিনিস, ক্লে ইত্যাদি হরেক রকমের জিনিস থেকে বিভিন্ন শোপিস তৈরি করা যায়। আপনি চাইলে এগুলোর উপর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন অথবা ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে শিখে নিতে পারেন। এই কাজে দক্ষতা ও সৃজনশীলতা সবচেয়ে বেশি দরকার।
এছাড়া সৌখিন আসবাবপত্র, দোলনা, ডিজাইনেবল কিচেন কেবিনেট, ফুলের টব, ছোট ফোয়ারা, ঝাড়বাতি ইত্যাদি নানান জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ রয়েছে। এগুলো ১০ হাজার টাকার মধ্যেই পাইকারি দরে কিনে বা নিজে তৈরি করে আপনি ভাল মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।
২৩। ইনভাইটেশনের কার্ড ছাপানোর কাজ
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়ার জন্য এখন অন্যতম উপায় হল কার্ড প্রদান করা। মানুষ এখন এই কার্ড ছাপানোর মধ্যেও সৌন্দর্য, রুচিশীলতা এবং অনন্যতা খোঁজে। যার কাছে এরকম হরেক ডিজাইনের কার্ড ছাপানো যাবে তার কাছেই বেশিরভাগ মানুষ ছুটে যাবে।
আপনি এই কাজটিও ১০ হাজার টাকার ভেতরেই বিনিয়োগ করে শুরু করতে পারেন। এইকাজে আপনার কার্ডের জন্য কাগজ, একটি প্রিন্টিং মেশিন ও আনুষঙ্গিক জিনিস কেনা লাগবে।
২৪। শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টার
এখন অনেক পরিবারেই মা-বাবা দুজনেই চাকরি করেন। সেই পরিবারে ছোট শিশুদের দেখাশোনার জন্য কেউ থাকে না। মা বা বাবার অফিস চলাকালীন সময়ে তাদের শিশুর দেখাশুনার দায়িত্ব নিতে পারেন। দিনের কিছু ঘন্টা বাচ্চাকে আপনার কাছে রাখা ও যত্নআত্তি করার বিনিময়ে আপনি তার বাবা-মা থেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা নিতে পারবেন।
এই কাজটি প্রাথমিকভাবে আপনার ঘরে শুরু করতে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে এটিকে প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর করতে পারেন। তবে এই কাজটি করার জন্য আপনাকে শতভাগ দায়িত্বশীল ও সৎ হতে হবে। কারন মা-বাবা তার আদরের সন্তানকে নিরাপদে রাখার জন্যই আপনার কাছে দিয়ে যাবে। আপনি বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারলে এই কাজটিই আপনার উপার্জনের জন্য যথেষ্ট হবে।
২৫। প্রাকৃতিক বা আর্টিফিশিয়াল ফুলের ব্যবসা
ফুলের চাহিদা সবখানেই আছে। বিয়ে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুলের ফাংশন, পূজা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে সারাবছর ফুলের দরকার পড়ে। প্রাকৃতিক ফুলের পাশাপাশি মানুষের তৈরি আর্টিফিশিয়াল ফুলেরও চাহিদা বিপুল।
আপনি এই ব্যবসাটি বেছে নিতে পারেন যদি ফুল সংগ্রহ আপনার জন্য সহজলভ্য হয়। আপনি নিজে ফুলের চাষ করতে পারেন অথবা কৃষকের কাছ থেকে পাইকারি দরে কিনে ব্যবসা করতে পারেন। অপরদিকে আর্টিফিশিয়াল ফুল নিজে তৈরি করতে পারেন বা প্রস্তুতকারক থেকে পাইকারি কিনে ব্যবসা করতে পারবেন। এই ব্যবসা ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেই শুরু করা যাবে।
২৬। পাখি পালন
মুরগি, কবুতর, ময়না, টিয়া, লাভ বার্ড, বাজরিগার, ককাটেল ইত্যাদি পাখি পালন ও বিক্রির মাধ্যমে খুব ভাল পরিমানে আয় সম্ভব। মানুষ বিভিন্ন পাখি শখের বশে পালনের জন্য কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া কবুতরের ও মুরগির চাহিদা তো বলা বাহুল্য।
আপনি চাইলে আপনার বাসার ছাদে যেকোনো এক বা একাধিক জাতের পাখি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এসব প্রাণীর জন্য উপযুক্ত খাঁচা বা খোপ তৈরি, খাবার সংগ্রহ ইত্যাদি কাজে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করে দিতে পারেন। পরবর্তীতে এই ব্যবসা বড় আকারে করতে পারবেন যদি সঠিক যত্ন ও নিয়ম মেনে কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন।
২৭। কৃষিজ কাজ
শাক-সব্জি, ফলমূল, ঔষধি গাছের চাষ করে অনেকেই লাভবান হচ্ছে। আপনার নিজের জায়গা থাকলে সেখানে চাষাবাদের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। অথবা কারও জায়গা ভাড়া নিয়ে বা স্বল্প পরিসরে নিজের ঘরের আশেপাশে, বাড়ির ছাদে চাষাবাদ করে বিক্রি করতে পারেন।
এইসব বিষয়ে কোন নার্সারি বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করলে লোকসানের সম্ভাবনা কমবে। এছাড়া মানুষ এখন কীটনাশক বিহীন খাদ্যের খোঁজ বেশি করছে। আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে ফসল ফলিয়ে তা বিক্রি করলে এর চাহিদাও অনেক হবে। সেই সাথে আপনার কিটনাশক কেনার অর্থও বেঁচে যাবে।
২৮। হোমডেলিভারি ব্যবসা
বর্তমানে অনলাইন ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে হোমডেলিভারির ব্যবসারও প্রসার ঘটছে। বিক্রেতার কাছ থেকে জিনিস নিয়ে তা ক্রেতার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে অনেক বেকার যুবক নিজেদের আয়ের ব্যবস্থা করছে।
আপনি চাইলে এই কাজটিকে বেছে নিতে পারেন। এজন্য আপনার দরকার ন্যূনতম একটি সাইকেল বা মোটরসাইকেল এবং একটি মোবাইল। প্রাথমিকভাবে নিজে শুরু করে পরে কয়েকজনের গ্রুপ করে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই কাজটিকে বড় আকারে নিতে পারবেন। কাজটিতে সাফল্যের জন্য দরকার সততা এবং সময়নিষ্ঠতা।
শেষ কথা
পৃথিবীতে ব্যবসা আইডিয়ার অভাব নেই। মানুষের চাহিদা, সমস্যা যত থাকবে তত সমাধানের চেষ্টা থাকবে। ফলে নিত্য নতুন ব্যবসা আইডিয়া বের হবে, এটাই স্বাভাবিক।
আপনার সুবিধা, জিনিসের সহজলভ্যতা, ক্রেতার চাহিদা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কি নিয়ে ব্যবসা করবেন তা ঠিক করুন। বেশিরভাগ ব্যবসাই অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা সম্ভব।
ব্যবসা করতে পুঁজির পাশাপাশি কৌশল ও নিয়ম কানুন জানতে হয়। প্রথমে জ্ঞান অর্জন করুন। তারপর অল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করুন। ১০ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করে পরিশ্রম, সততা, ধৈর্য ও কৌশলের মাধ্যমে তা কোটি টাকার ব্যবসায় রুপান্তর করতে পারবেন একসময়।

Bachelor of Business Administration,
East West University
One Comment