কম খরচে সহজেই মুরগীর খামার তৈরির পদ্ধতি
আপনি চাইলে কম সময়ে, কম পরিশ্রমে এবং স্বল্প পুঁজিতে মুরগির খামার করে নিজের ভাগ্যের চাকার পরিবর্তন করতে পারেন। তাছাড়া চাকরির আশায় বসে না থেকে আত্নকর্মসংস্থান মূলক কাজ করে সমাজকেও কিছু দিতে পারেন। তাই দেশের বর্তমান বাজারে চাহিদা থাকায় উন্নত জাতের মুরগি পালনে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উৎসাহ দিন দিন বাড়ছে।
১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েই শুরু করা যায় এ ব্যবসা। তাছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়া মুরগি পালনের জন্য বেশ উপযোগী। মাত্র দেড় থেকে তিন মাসের মধ্যে লাভবান হওয়া যায়। তবে এর জন্য পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনাও থাকতে হবে।
সুতরাং আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লেই বুঝতে পারবেন কিভাবে কম খরচে মুরগির খামার করা যায়।
কিভাবে আপনি মুরগীর খামার শুরু করবেন?
মুরগীর খামার করতে হলে আপনার কারিগরি জ্ঞান থাকতে হবে। আপনি চাইলে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল বা দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তাছাড়া আপনার আশপাশে কোন ব্যক্তির মুরগীর খামার থাকলে তাঁর খামারে কিছুদিন কাজ করে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
ভাল খামার গড়তে হলে অবশ্যই আপনার সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। প্রস্তুতি না থাকলে তো আপনি সফলতা তো পাবেনই না সাথে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই প্রথম দিকে বিশাল আাকরের খামার না করে স্বল্প আকারের খামার করা উচিত। এতে আপনার অভিজ্ঞতা হবে।
আপনি প্রথমদিকে ৩০০-৪০০ মুরগী নিয়ে খামার শুরু করে আস্তে আস্তে খামার সম্প্রসারণ করলেন।
মুরগী পালনের জন্য ঘর তৈরি:
আপনি মুরগির খামার গড়ে তুলতে চাইলে প্রথমেই প্রয়োজন হবে মুরগির ঘর ঠিক করা। সর্বপ্রথম উচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে খামারে বৃষ্টির পানি জমতে পারে।
তাই মুরগির থাকার ঘর উচ্চতায় চার ফুট, প্রস্থে সাড়ে ৪ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৬ ফুট হবে। এর ভেতরে ডিম পাড়ার খাঁচি, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র রাখতে হবে। আর সাথে যেসব বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবেঃ
- মুরগীর থাকার ঘর সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- খোলামেলা স্থানে ঘর বানতে হবে। যাতে ঘরে প্রচুর আলোবাতাস প্রবেশ করতে পারে।
- ঘরের মেঝে তিন ইঞ্চি পুরু হবে সাথে পরিমাণমত তুস, কাঠের গুঁড়া বা বালির সঙ্গে আধা কেজি গুঁড়া চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে সমানভাবে বিছিয়ে দিন।
- মেঝের কাঠের গুঁড়া বা তুস ৭ দিন পরপর অবশ্যই ওলট-পালট করে দিতে হবে। স্যাঁতসঁতে হলে বা জমাট বেধে গেলে তা পরিবর্তন করে দিতে হবে।
মুরগি সংগ্রহের স্থান:
আপনি উন্নত জাতের মুরগি কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন এটা নিয়ে দুঃচিন্তার কিছু নেই। আপনি ঢাকার মণিপুর কেন্দ্রীয় মোরগ-মুরগি খামার থেকে কিংবা কৃষি পশুসম্পদ অধিদপ্তরের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারবেন। তাছাড়া বর্তমানে যুগে, ইন্টারনেটে এবং স্মার্টফোন হাতের নাগালে থাকার কারণে গুগলে সার্চ করলেই কয়েকে মিনিটের মধ্যে অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন।
যাঁরা চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী শহরের যাঁরা উন্নত জাতের মুরগি লালন-পালন আগ্রহী। তারা চাইলেই যথাক্রমে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এবং রাজশাহীর রাজবাড়ী হাট আঞ্চলিক মুরগির খামার থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারেন।
এ ছাড়া সিলেট, বগুড়া, কুমিল্লা, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রংপুর, রাজশাহী, কুড়িগ্রাম, বরিশাল, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, সীতাকুণ্ড, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ফরিদপুর, দিনাজপুর, মাদারীপুর, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ আর জামালপুরে দেশের সকল অঞ্চলে সরকারি মুরগি খামার আছে।স্ব-স্ব এলাকার বাসিন্দারা এসব খামার থেকে উন্নত জাতের মুরগি সংগ্রহ করতে পারবেন।
মুরগির খাদ্য:
অধিক ডিম পেতে হলে মুরগীকে দৈনিক সুষম খাবার খেতে দিতে হবে। প্রতিদিন প্রতিটি মুরগীকে প্রায় ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও ২৫ গ্রাম সবুজ শাক-সবজি বা কচি ঘাস কুচি কুচি করে কেটে খেতে দিতে হবে। আপনি চাইলে নিজেই সুষম খাদ্য তৈরি করতে পারেন।
সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো নিম্নরূপ:
- গম/ভুট্টা ভাঙা বা চালের খুদ প্রায় ৪০০ গ্রাম।
- গমের ভুসি ৫০ গ্রাম।
- চালের কুঁড়া ২৫০ গ্রাম।
- তিলের খৈল ১২০ গ্রাম।
- শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০০ গ্রাম।
- ঝিনুকের গুঁড়া ৭৫ গ্রাম।
সুষম খাদ্য মোট ১,০০০ গ্রাম বা ১ কেজি।
মুরগীর রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
মুরগীকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত টিকা দিতে হবে। আপনি চাইলে, পশুসম্পদ বিভাগ থেকে বিনামূল্যে রাণীক্ষেত, কলেরা, বসন্ত রোগের প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ করতে পারেন। আপনার খামারের কোন মুরগি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিৎসাকের পরামর্শ নেবেন। অসুস্থ মুরগিকে চিহ্নিত করে সাথে সাথে আলাদা করে রাখতে হবে। তা না হলে সুস্থ মুরগীও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত মুরগির বিষ্ঠা ও লালা সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
মুরগীর খামার ব্যবসায়ে আয়-ব্যয়:
একটি ঘর (খাবার পাত্রসহ) তৈরি বাবদ প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হবে এবং ঘর কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে। ছয় মাস বয়সের ৯টি মুরগি এবং ১টি মোরগের ক্রয়মূল্য প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকার মত। ডিম কিনলে ১টির দাম পড়বে ৮ টাকা। মুরগির বাচ্চা কিনলে ১টির দাম পড়বে ৪০ টাকা। ৯টির দাম হবে ৩৬০ টাকা। প্রতি মাসে মুরগির খাবার ক্রয় বাবদ প্রায় ১০০০ টাকা ব্যয় হবে।
আপনি যদি নিজেই মুরগির সুষম খাবার তৈরি করতে পারেন, তাহলে খরচ আরও কম হবে। ৯টি মুরগি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬-৭টি ডিম পাওয়া যাবে। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৪৪০ টাকা আয় করতে পারবেন। আপনি চাইলে উৎপাদিত ডিম, খাবার এবং বাচ্চা ফুটানোর ডিম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
বাজারজাতকরণের পদ্ধতিঃ
মুরগী ডিমে ও মাংসে প্রচুর পরিমাণে আমিষ পাওয়া যায়। যার ফলে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকে সবসময়। আপনি চাইলে খামারের মুরগি বা ডিমগুলো আপনার এলাকায় যে ব্যক্তির দোকান আছে তাঁর কাছে বিক্রি করতে। এমনকি আপনি সুপার শপের মার্কেটেও বিক্রি করতে পারবেন। বর্তমানে ইন্টারনেটের সুযোগ- সুবিধা থাকার কারণে, অনলাইন মার্কেট প্লেসেও বিক্রি করতে পারবেন।
উপসংহারঃ
কম খরচে মুরগীর খামার করে সহজেই স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আপনার বসতবাড়িতে অল্প শ্রম ও কম খরচে মুরগি পালন করে পরিবারের প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের ঘাটতি সহজেই মেটানো পারবেন। পারিবারিকভাবে, মুরগি পালনের ফলে পরিবারের ছেলে-মেয়েও খামারে সময় দিতে পারে। এতে আপনি লাভবান হবেন। দেশে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ হবে।
আশা করি, আজকের আর্টিকেল পড়ে আপনি কম খরচে মুরগীর খামার তৈরি করার ব্যাপারে একটা ধারণা পেয়ে গেছেন। তাহলে আজই শুরু দিন, আপনার মুরগীর খামার ব্যবসা।
