ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতি এবং উপকারিতা
বর্তমানে ইট পাথরের নাগরিক সভ্যতায় হারিয়ে যাচ্ছে সবুজের সমারোহ। আমাদের নিজেদের উদ্যোগে এক টুকরো প্রাঞ্জল বাগিচা কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারে সেই ঘাটতি। আর তা যদি হয় কোন শৌখিন সবজি তবে সেটা যেমন পুষ্টিকর তেমনি লাভজনক। সম্মানিত শ্রোতামন্ডলি ও দর্শক বন্ধুরা, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুরু করলাম আমাদের আজকের এপিসোর্ড বাড়িতেই করুন ক্যাপসিকাম চাষ।
ক্যাপসিকাম কি?
ক্যাপসিকাম বর্তমান বিশ্বের অত্যন্ত জনপ্রিয় সবজি। এর বিভিন্ন ধরনের নাম রয়েছে যেমন বেল পেপার, সিমলা মরিচ, তবে ক্যাপসিকাম নামে এই সবচেয়ে বেশি পরিচিত বা জনপ্রিয়।
এটি হচ্ছে এক জাতীয় মিষ্টি মরিচ য কিনা বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় অভিজাত হোটেল, রেস্তোরাসহ বেশিরভাগ বাসাবাড়িতে এর ব্যবহার হচ্ছে প্রচুর পরিমানে।
বাংলাদেশেও দিন দিন ক্যাপসিকাম ব্যবহার এবং এর ফলপ্রসূ চাষ প্রসারিত হচ্ছে ।
পুষ্টির গুনাগুন হিসেবে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন “সি” থাকে বলে, খুব সহজেই বাসার বারান্দা কিংবা ছাদের টবে চাষ করা যায়। আরো মজার বিষয় হচ্ছে এটি যদিও একটি ভিনদেশী সবজি, এর বাম্পার ফলনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী, কারন ক্যাপসিকাম চাষের জন্য সবসময় প্রয়োজন ১৬-২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা। এর নিচে হলে ফলন হবেনা। আর তাই শীতপ্রধান দেশগুলো গ্রীনহাউজের মাধ্যমে এর চাষ করে থাকে।
ক্যাপসিকাম জাতঃ
বলে রাখা প্রয়োজন যে, এই ক্যাপসিকামের বিভিন্ন ধরনের জাত হয়ে থাকে, এর মধ্যে উন্নত জাতগুলো হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াণ্ডার, ইয়োলো ওয়াণ্ডার, চায়নিজ জায়েন্ট, হাম্বার্স, কিং অফ নর্থ ইত্যাদি।
সবচেয়ে ভালো সফলতার উদাহরনঃ
বাংলাদেশের ভোলা সহ অনেক অঞ্চলে এর লাভজনক চাষে অনেক চাষী ভাইদের ভাগ্যের উন্নতি হয়েছে। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম এর বাজার মূল্য ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়।
ক্যাপসিকাম উপকারিতাঃ
এবার জেনে নেই ক্যাপসিকাম এর উপকারিতা।
ক্যাপসিকামে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণও বেশি থাকে বলে ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় থাকে, চুলের সৌন্দর্য বাড়ে, চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং এতে কোলেস্টেরল কম থাকায় এটি মোটা হওয়ার প্রবণতা কমাতে গুরত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে।
এছাড়া , ক্যাপসিকাম খেলে ক্যান্সার প্রতিরোধ, ডায়বেটিক প্রতিরোধে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, দেহে আয়রন এর ঘাটতি পূরনে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে, হজম জনিত সমস্যা দূরীকরণে অসাধারন ভূমকা পালন করে।
ক্যাপসিকাম আপকারিতাঃ
যদিও এর উপকারি দিকের অভাব নেই তবুও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে।
যেমনঃ পরিমানের বেশি ক্যাপসিকাম খেলে, পেটে জ্বালা, ঘাম এবং নাক দিয়ে পানি পড়ে, আবার ক্যাপসিকাম দিয়ে তৈরি লোশন বা ক্রিম প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য হলেও এর ব্যবহারে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। নাকে যদি ক্যাপসিকাম লেগে থাকে তবে তা হবে খুবি মারাত্মক ও বেদনাদায়ক।
ছাদের টবে ক্যাপসিকাম চাষ পদ্ধতিঃ
বর্তমানে বাজারে ক্যাপসিকাম ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারনত একটি ক্যাপসিকাম গাছে আড়াই থেকে তিন কেজি পরিমান ক্যাপসিকাম ধরলে তার দাম পড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু একটি গাছের দাম মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা এবং অন্যান্য খরচ মিলিয়ে একটি গাছের পেছনে আনুমানিক ১৫০ টাকার মতো খরচ হয়।

আপনি যদি ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে চান, তবে পরিপক্ক ক্যাপসিকাম থেকেই বীজ সংগ্রহ করতে হবে। অথবা নার্সারি থেকে এ গাছের চারা সংগ্রহ করতে পারেন। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে যে, ঐ ক্যাপসিকাম এর চারা এর বয়স ১ মাস অতিক্রম হয়েছে কিনা।
নার্সারি থেকে চারা আনার পর ছিদ্রযুক্ত টব নিতে হবে যেন পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকে। একটা বিষয় বলে রাখা দরকার সেটি হচ্ছে যদিও বাংলাদেশের সব ঋতুতেই ক্যাপসিকাম এর ফলন ভালো হয় কিন্তু ভাদ্র ও আশ্বিন মাস সবচেয়ে বেশি উপযোগী। এই ক্যাপসিকাম খরা এবং গাছের গোড়ায় পানি জমা কোনটিই সহ্য করতে পারে না। অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস এই ক্যাপসিকাম ফলনের জন্য উপযুক্ত সময়।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে ঝুরঝুরে দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ভালো। টবের মাটি প্রস্তুতের সময় এক-তৃতীয়াংশ জৈব সার মেশাতে হবে। তাঁর পর টবে চারা গাছ প্রতিস্থাপন করতে হবে। সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে পানি যেন কোন ভাবেই গাছের গোড়ায় না জমে। নয়তো গাছ ফল দিবেনা।
সেই সঙ্গে নিয়মিত পরিমিত পানি দিতে হবে যেন মাটি শুকিয়ে না যায়। প্রতি ২০ দিন অন্তর অন্তর ১ চামচ করে ইউরিয়া সার দিতে হবে।
চারা গাছ যদি একটু বড় তবে শক্ত খুঁটি দিতে হবে যেন হেলে না পড়ে যায়।
প্রচুর পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ হওয়ায় এই গাছে পোকামাকড়ের আক্রমন হয়ে থাকে এবং খেয়াল রাখতে হবে, ক্যাপসিকামের পাতায় যেন রোগের উপদ্রব না হয়। ক্যাপসিকামের গাছে সাধারণত, দুই ধরনের রোগ চোখে পড়ে । একটি হলো পাতা কুঁকড়ে যাওয়া বা ব্লাইট ডিজিস ও অন্যটি হলো পাতার উপরে কালো দাগ হওয়া বা এ্যানথ্রাকনোজ ডিজিছ। জাবপোকা. থ্রিপস পোকা, লালমাকড় এর আক্রমনে এই সমস্যা তৈরি হয়। তবে ঘাবড়ে যাবার কোন কারন নেই, কারন আপনি এক্টু পরিচর্যা করলে এই রোগ স্পর্শ করতে পারবেনা।
তাঁর জন্য নিম তেল বা সাবান পানি কয়েকদিন পর পর স্প্রে করে দিতে পারেন। পাতার উপরে পরা কালো দাগ ক্যাপসিকামের ফলন কমিয়ে দিতে পারে এমনকি মেরে ফেলতে পারে গাছ। তাঁর জন্যে এক লিটার পানিতে দুই গ্রাম ব্যাভিস্টিন গুলিয়ে ১৫ দিন পরপর স্প্রে করা যেতে পারে।

Bachelor of Business Administration,
East West University