১০টি গর্ভবতী হওয়ার প্রধান লক্ষণ গুলো জানুন ঘরোয়া উপায়ে!

আামদের দেশের অধিকাংশ মহিলারা বিশেষ করে, যারা প্রথমবার মা হতে যাচ্ছেন শুধুমাত্র তারাই গর্ভবর্তী হওয়ার লক্ষণগুলো নিয়ে কনফিউজড থাকেন। কোন মাসে পিরিয়ড না-হলে সাধারণত বিবাহিত মহিলারা তাঁকে প্রেগনেন্সির প্রধান লক্ষণ মনে করে থাকেন।

কিন্তু পিরিয়ড মিস হওয়াই গর্ভধারণের একমাত্র লক্ষণ নয়। অনেক সময়, পিরিয়ড মিস না-হওয়া সত্ত্বেও গর্ভধারণ করেছেন অনেক মহিলা।

পিরিয়ড ছাড়াও নানান শারীরবৃত্তিয় ঘটনা রয়েছে যা গর্ভধারণের দিকে ইশারা করে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অধিকাংশ মহিলাই এ বিষয়গুলো অবেহলা করে থাকেন। যার ফলে ভবিষ্যৎ অনেক সমস্যা দেখা দেয়।

তাই আজকের এই আর্টিকেলে গর্ভবতী হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো নিয়ে আলোকপাত করবো। তাহলে আর কোন গর্ভবতী আপনি গর্ভবতী হয়েছেন বা হয়েছেন কি-না এটা নিয়ে কনফিউশান দূর হবে।

পিরিয়ড ছাড়াও নানা শারীরবৃত্তিয় ঘটনা আছে, যা গর্ভধারণের ইঙ্গিত দেয়। জেনে নিন পিরিয়ড মিস ছাড়াও শরীরের যেসব পরিবর্তন দেখে গর্ভধারণের বিষয় নিশ্চিত হতে পারেন-

মর্নিং সিকনেস:

মর্নিং সিকনেসকে প্রেগনেন্সির গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ বলে মনে করা হয়। দিনে বা রাতে- যে কোন সময় এমন হতে পারে। গর্ভধারণের এক মাস পর থেকে সাধারণত এই সমস্যা দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে মহিলারা অস্বস্তি অনুভব করেন। ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের পর বমি শুরু হয়। এ সময় অ্যাস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনোর স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সকালে উঠে সাধারনত গা গোলায় বা বমি হয়ে থাকে।

তবে শুধুই যে সকালে বমি হবে, তার কোন মানে নেই। দিনের যে কোনও সময় একাধিক বার বমি হতে পারে। পিরিয়ড মিস করার আগে থেকেই প্রথম সপ্তাহে ৮০ শতাংশ মহিলা বমির সমস্যায় ভুগে থাকেন। আবার ৫০ শতাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ৬ সপ্তাহ বা তার আগে থেকে বমি বমি ভাব শুরু হয়।

স্তনযুগলে পরিবর্তন:

স্তনে ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা ভারী হওয়া গর্ভধারণের লক্ষণ বলেও ধরে নেওয়া হয়। তবে কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের পরই স্তনে ব্যথা হয় বা ভারী হয়ে যায়। আপনার সঙ্গেও এমন কিছু হলে সাথে সাথে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে দেখে নেবেন।

See also  ফুসফুস ভালো ও পরিষ্কার রাখার উপায় (খাবার, ব্যায়াম)

ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ:

সংক্রমণের কারণে এমন হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের এই ডিসচার্জ হয়। কিছু কিছু মহিলার প্রেগনেন্সির প্রথম তিনমাসে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ হয়ে থাকে। হরমোনে পরিবর্তনের ফলেই এই ডিসচার্জ হয় বলে মনে করা হয়।

যোনিস্রাব (ইংরেজি: Vaginal Discharge) হলো জল, কোষ ও ব্যাকটেরিয়ার মিশ্রন যা যোনিকে পিচ্ছিল করে ও জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যোনি ও কারভিক্সের কোষগুলো অনর্গলের মিশ্রনটি তৈরী করে এবং যোনির মুখ দিয়ে বের হয়।

শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:

বিভিন্ন কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। সংক্রমণ বা সর্দি কারণেও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে অনেক সময় গর্ভধারণের কারণেও শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। গর্ভধারণ কালে প্রোজেস্টেরোনের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন হতে পারে। ২০ দিন পর যদি শরীরের তাপমাত্রা ওভুলেশানের কারণে বৃদ্ধি পায়। তাহলে এটি জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনার দিকে ইঙ্গিত দেয়।

ক্লান্তি:

গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে পিরিয়ড বন্ধ না-হলেও ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হলে আপনি প্রেগনেন্সি টেস্ট করে নিতে পারেন। এই ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনেক সময় গর্ভধারণের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং:

পিরিয়ডয়ের তারিখ ছাড়াও যদি মাঝে মধ্যে ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং প্রত্যক্ষ করে থাকেন, তা হলে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করিয়ে নিন। ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং, স্পটিং ও ক্র্যাম্পস গর্ভধারণের দিকে ইশারা করে থাকে।

মুড সুইং ও মাথা ঘোরা:

গর্ভধারণের সময় হরমোনে নানান ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তন মুড সুইঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আকস্মিক কান্না, হঠাৎ করে রেগে যাওয়া, আনন্দিত হয়ে পড়া আবার কখনও এক্সাইটেড হয়ে পড়া এ সমম এগুলো সাধারণ ঘটনা। আপনার সঙ্গেও এমন কিছু হয়ে থাকলে, উপেক্ষা করবেন না। প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করে দেখে দিন। পাশাপাশি প্রায়ই মাথা ঘোরা ও গা গোলানো গর্ভধারণের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

মাথা ব্যথা ও মাথা ভারী হওয়া:

গর্ভধারণের শুরুর দিকে মাথা ব্যথা দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রক্ত সঞ্চালন এবং হরমোনের স্তর বৃদ্ধির কারণে এমন হতে পারে। এ সময় তীব্র মাথা ব্যথার পাশাপাশি ক্লান্তি ভাব অনুভব করতে পারেন। 

See also  ১০টি দ্রুত দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

বার বার শৌচালয় যাওয়া:

বার বার টয়লেট যাওয়া গর্ভধারণের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। ওভ্যুলেশান প্রক্রিয়ার পর গর্ভধারণ সম্পন্ন হলে, দিনে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার প্রস্রাব হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থার সময় শরীরের রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় কিডনি অধিক পরিমাণে তরল নিঃসৃত করতে শুরু করে, যা প্রস্বাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে।

খাওয়া-দাওয়ার ইচ্ছায় পরিবর্তন:

গর্ভধারণের পর অধিকাংশ মহিলার স্বাদ পাল্টে যায়। এই সময় মহিলারা শাক-সবজি বা খাবার খেতে শুরু করে দেন, যা তাঁরা খেতে পছন্দ করেন না। আবার পছন্দের খাবার অনেক গর্ভবতী মহিলারা খেতে চায় না। এখানেই শেষ নয়, গর্ভধারণকালে, দিন বা রাতের যে কোন সময়, যে কোন খাবার খেতে ইচ্ছা জাগতেও পারে।

উপসংহারঃ

উপরের বর্ণিত  লক্ষণগুলো আপানার মধ্যে দেখলেই বুঝবেন আপনি গর্ভবতী হতে চলেছেন। তাছাড়া আপনি চাইলে বাজার থেকে টেস্টিং কিট কিনেও প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন। রেজাল্ট পজিটিভ হলে, সেদিন থেকে আপনার যত্ন নেওয়া শুরু করে দিন। প্রয়োজনে গাইনী ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *