|

অল্প পুজিতে গ্রামে ব্যবসার আইডিয়া, লাভ হবে দ্বিগুন!

গ্রামে খুব সহজে স্বল্প পুজিতে কি ধরনের লাভজনক ব্যাবসা করা যায়, এই নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন ঘুরতে থাকে। কিন্তু প্রকৃত তথ্য না পাওয়ার কারনে আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারিনা কোন ব্যাবস শুরু করব।

মনে রাখবেন ব্যাবসা যেমন আপনাকে ধনী করতে পারে তেমনি নিঃস্ব ও করতে পারে। তবে যত রিস্কি ব্যাবসাই হোকনা কেন, আপনি যদি মার্কেট সম্পর্কে প্রোপার নলেজ রাখেন এবং উপযুক্তভাবে সময়, মেধা ও শ্রম দিয়ে যান তবে সকলেই ৯৯.৯৯% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে লস হবেনা। বরং লাভ হবার সম্ভাবনা ৮০%-৯০%।

আজ আপনাদের সাথে, গ্রামে সবচেয়ে লাভজনক স্বল্প পুজির এমন ৩ টি ব্যাবসার আইডিয়া শেয়ার করব। তা যদি আপনি জানতে পাররেন তাহলে আপনার জন্য অনেক সহজ হবে সিদ্ধান্ত নিতে। এর জন্য ভাইটাল কোন স্কিলের প্রয়োজন নেই, শুধু প্রয়োজন আপনার একটু আত্মবিশ্বাস।

হাঁস পালন ব্যবসাঃ

একটু খবর নিলেই আপনারা জানতে পারবেন বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ অল্প সময়ে হাঁস পালন ব্যবসা করে ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করছে। হাঁস এমনি একটি লাভজনক ব্যবসা যেটি কিনা খুব দ্রুত আপনার লাভ বা প্রফিট জেনারেট করতে সক্ষম। এই ব্যবসা করতে খুব বেশি পুজির প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হাঁস সম্পর্কে প্রোপার নলেজ। খুব দ্রুত লাভজনক হলেও এই ব্যবসায় সবচেয়ে বড় রিস্ক হচ্ছে হাঁসের রোগ। প্লেগ, হেপাটাইটিস এই রোগে হাঁস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আর এই রোগ এর প্রধান কারন হলো অসাস্থকর পরিবেশ।

খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন

আপনি চাইলে মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ডিমের জন্য বাংলাদেশে ২ ধরনের হাঁস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। মাস্কোভি বা চীনা হাঁস এবং খাকি ক্যাম্পবেল। আপনি খুব সহজে ১৫ থেকে ২০ টি হাঁস নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

See also  ১২টি অসাধারণ ঘরে বসে অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া

তবে চীনা হাঁস থেকে খাকি ক্যাম্পবেল তুলনামূলক বছরে বেশি ডিম দিয়ে থাকে। ঠিকঠাক মত পরিচর্যা করতে পারলে আপনি প্রচুর প্রফিট জেনারেট করতে পারবেন।


আসুন একটা আনুমানিক খরচ ও প্রফিট এর সিনারিও দেখে নেই। ৩০ দিনের খাকি কেম্বেল হাঁসের বাচ্চার ২০ টি হাঁস কিনতে খরচ হবে (১৩০/১৫০ টাকা * ২০) ২৬০০- ৩০০০ টাকা।


আমরা যদি ৩ বছরের টার্গেট করে করি তবে হিসাবটাও ৩ বছর অনুযায়ী হবে। খাবারের জন্য কুঁড়াপ্রতি বস্তা পড়বে ২০০ টাকা, ২ মাসে এক বস্তা করে কুঁড়া লাগলে। তাহলে ১২ মাসে ১২০০ টাকা। পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতার জন্য ব্লিচিং পাউডার। ১ বছরে খরচ হতে পারে ৭২০ টাকা ব তাঁর কম। কাঠের গুড়ো এর প্রয়োজন ৬০০ টাকা। ঔষধ খরচের জন্য ধরলাম ১০০০ টাকা। তাহলে ১ বছরে মোট খরচ হবে আনুমানিক ৩৫২০ টাকা। এবার ৩ বছরের জন্য আসে ১০৫৬০ টাকা. এসব তো ছিলো খরচের হিসাব।

এবার আসি লাভের হিসেবে। এই হাঁস বছরে ডিম দেয় গড়ে ২৩০ টি। ২০ টি হাঁসের মধ্যে ১৫ টি ডিম দিলে হয় ৩৪৫০ টি। ৩০ টাকা হালি দরে বিক্রি করলে আসে ২৫,৮৭৫ টাকা। এটা তো শুরু। আপনি ৩ বছর পর প্রতিটি হাঁস ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারবেন।

অল্প পুজিতে ছাগল পালনের ব্যবসাঃ

সঠিক পরিশ্রম ও পরিকল্পিত উপায়ে আপনি চাইলে অল্প পুজি বিনিয়োগ করে ছাগল পালনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তাঁর জন্য প্রয়োজন দৃঢ়ভাবে লেগে থাকার প্রত্যয়।


স্বল্প পুজিতে এই ব্যবসা করা যায় বলে ছাগলকে গরিবের গাভী বলে। কম পুজির মধ্য়ে এটি সবচেয়ে বেশি লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে প্রচুর মানুষ ছাগল পালনের মাধ্যমে দুধ এবং মাংসের চাহিদা মিটাচ্ছে এছাড়াও ছাগলের দুধ, মাংস, বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে।

আনুমানিক ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আপনি এ ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আপনি সর্বোচ্চ ৪০ টি ছাগল একাই পালতে পারবেন। বাংলাদেশের ব্ল্যাক ব্যাঙ্গল ছাগল বিশ্বে সেরা ১০০ টি উৎকৃষ্ট জাতের ছাগলের মধ্যে সেরা জাত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই ব্যবসার জন্য বেশি যায়গার প্রয়োজন হয়না। গ্রামের মহিলা বা বাচ্চারা খুব সহজেই এর দেখাশুনা করতে পারে।

See also  গুরুত্বপূর্ণ জমির দলিল হারিয়ে গেলে তুলে নিন সহজেই

বছরে ২ বার ছাগী বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রতিবার ই ২ এর অধিক বাচ্চা দেয়। অন্যান্য জাতের ছাগলের চেয়ে এর এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় প্রচুর স্বল্প বিনিয়োগকারী এতে ঝুঁকছে প্রচুর পরিমানে।

একটা বিষয় জানিয়ে রাখা প্রয়োজন যে অল্প পুজিতে ছাগলের ব্যবসা ডিপেন্ড করে পরিকল্পনার উপর, যেমন ১০ টা ছাগল পালন করতে কারো খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা আবার কারো খরচ হয় ১ লক্ষ টাকা। ৩ টা সুস্থ সবল মেয়ে ছাগল কিনতে খরচ হবে আনুমানিক ১৮-২০ হাজার টাকা। দানাদার খাবারের জন্য প্রতি মাসে ১-১.৫ হাজার টাকা তাহলে ১২ মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা। চিকিৎসা ও ঔষধ এর জন্য বছরে ৩৫০০-৩৬০০ টাকা। একটি পাঠা নিলে কমপক্ষে ১০-২৫ হাজার টাকা আর উন্নত জাত যেমন, সিরহি জাতের পাঠার মূল্য ৩০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত পরে।

ছাগল ব্যবসা যেমন স্বল্প পুজিতে শুরু করতে পারেন তেমনি পরিকল্পিত উপায়ে করলে প্রচুর মুনাফা ও অর্জন করতে পারবেন।

গ্রামে চা-পাতা বিক্রির ব্যবসাঃ

প্রতিটা ব্যাবসা করতে হলে আপনার চোখ কান সর্বদা খোলা রাখতে হবে, একটা বিষয় হলো আপনার গ্রামে অধিকাংশ মানুষ অবশ্যই চা এর দোকানে ভিড় জমায়। চা এর দোকানে বেশিরভাগ মানুষ এক কাপ হলেও চা পান করে। দুঃখিত, ভুল ভাব্বেন্না, আমি চা এর দোকান দেয়ার কথা বলছিনা। এখন হিসেব দেই কিভাবে স্বল্প পুজিতে লাভ হল।

ধরুন আপনি একটি গ্রামে ২৫ টি দোকানে চাপাতা সাপ্লাই দিয়ে থাকেন, প্রতিদিন প্রতিটি দোকানে আপনার যদি ১০-১৫ টাকা লাভ থাকে তাহলে প্রতি দিন আপনার লাভ আসছে ২৫০-৩৭৫ টাকা, নরমালি প্রতিদিন ২০ টাকা এর নিচে কেউ লাভ করে না।


সেক্ষেত্রে প্রতিদিন লাভ আসবে ৫০০ টাকা এটা তো বললাম শুধু শুরুর দিকের কথা। আপনার পরিচিতি এবং ট্যাকনিক এর উপর ডিপেন্ড করে প্রফিট ৩ গুন থেকে ৫ গুন ইঙ্ক্রিজ করতে পারবেন।

See also  চেরি ফলের উপকারিতা এবং টবে চাষ পদ্ধতি


তাহলে শুরুতেই আপনি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পার মান্থ মানে প্রতি মাসে প্রফিট করতে পারছেন। এবং কিছু মাস পর তা বেড়ে যাবে ৩-৫ গুন। তবে অবশ্যই অন্যান্যদের বিজনেস ধরন ও টেকটিজগুলো ফলো করার চেষ্টা করবেন। আশা করছি ভালো প্রফিট আসবে তবে মজার বিষয় হচ্ছে দিন দিন এই বিজনেস ইঙ্ক্রিজ করছে। সুতরাং শুরুর দিকে থাকতে পারলে আপনার সফলতা নিশ্চিত।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *