চাঁদে জমি কেনা সম্ভব না অসম্ভব এবং কিভাবে কিনবেন?

চাঁদে জমি কেনা অসম্ভব শুনালেও কিছু স্বপ্ন বিলাসী মানুষ আজ তা সম্ভব করেছে লুফে নিয়েছে চাঁদের বুকে এক টুকরো জমি নিজের নামে । যদিও তা ভোগ করা হয়তো সম্ভব হবে না, তবে সবারই জানার ইচ্ছে কিভাবে বা কে এ জমির বিক্রেতা? জমি কেনার জন্য মার্কিন নাগরিক ডেনিস হোপের “লুনার অ্যামবাসি ” হলো সবচেয়ে জনপ্রিয় কোম্পানি।

সাবেক তিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ,জিমি কার্টার ও রোল্যান্ড রিগ্যান সহ ভারতের বেশ কয়েকজন নামিদামি তারকা প্রয়াত সুশান্ত সিং, শাহরুখ খান ও আরো অনেকে এ কোম্পানি থেকে চাঁদে জমি কিনেছে এ খবরে উচ্ছ্বাসিত হয়ে বাংলাদেশের এসএস শাহীন আলম ও শেখ শাকিল হোসেন নামের দুই তরুণ ৫৫ ডলারের বিনিময় কল্পরাজ্যের চাঁদের বুকে একটুকরো জমি কিনেছেন বলে দাবি করেন।

তারই ধারাবাহিকতায় খুলনার এমডি অসীম নামের এক ব্যক্তি তার ষষ্ঠ বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রী ইসরাত টুম্পাকে চাঁদের জমি কিনে দিয়েছেন। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল বিবাহ বার্ষিকীতে স্ত্রীকে বিশেষ কিছু উপহার দেওয়ার।

ভারতের এক ব্যক্তি বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে চাঁদের জমি কিনে দিয়েছেন। তার অনুপ্রেরণায় তিনিও ডেনিস হোপের লুনার এ্যম্বাসিতে চাঁদের জমি কেনার জন্য আবেদন করেন এবং ড্যানিশ হোপ এর ওয়েব সাইট থেকে ৪৫ ডলারের বিনিময় কিনে নেন চাঁদের বুকে এক টুকরো জমি। ২৯সেপ্টেম্বর ২০২১ ই -মেইলের মাধ্যমে লুনার এ্যম্বাসি ডট কম তাকে জমির কাগজ পাঠান। এমনকি জমি কেনার পর তাকে একটি বিক্রয় চুক্তিনামা ,কেনা জমির একটি স্যাটেলাইট ছবি ,জমিরটির ভৌগলিক অবস্থান এবং মৌজা পর্চার মতো আইনি নথীও পাঠিয়েছে ।তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি যা করেছেন তা হয়তো শাজাহানের তাজমহল তৈরি করার মতোই, একটি দৃশ্যমান অন্যটি অদৃশ্যমান ।

কিন্তু প্রশ্ন হল চাঁদে জমি বিক্রি করার আইনি অধিকার কি কোন ব্যক্তি বা কোম্পানির আছে? ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন প্রথম চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অভিযানে মানুষ চাঁদের বুকে অবতরণ করেছিল ।১৯৭২ সালের পর থেকে আর কোন মানুষ চাঁদে অবতরণ করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৩,২০১৯, ২০২০ সালে চীন চাঁদে সফলভাবে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছেন । যদিও যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য রাশিয়া ও জাপানের মতো প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে সবসময়ই মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে, তথাপি এর মালিকানা পাওয়া কি এতই সহজ?

See also  সৌদি আরবের নিওম শহর গাড়িমুক্ত, দূষণমুক্ত আধুনিক শহর

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা যখন চাঁদের বুকে প্রথম মানুষ্যবাহী যান পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল তখন জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য ‘ আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামের এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সেখানে বলা হয়েছে কোনো নির্দিষ্ট দেশ চাঁদ সহ মহাকাশের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহের সার্বভৌমত্ব মালিকানা দাবি কিংবা কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেনা । ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১১১ টি দেশে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

১৯৭৯সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘মুন এগ্রিমেন্ট’ নামে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এই চুক্তিতে বলা হয় চাঁদকে শুধুমাত্র বিশ্ববাসীর শান্তির স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে । এখানে কোন দেশ ও ব্যক্তি যদি স্টেশন স্থাপন করতে চায় তাহলে জাতিসংঘকে আগে জানাতে হবে। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী চাঁদ এবং এর প্রাকৃতিক সম্পদের সাধারণ উত্তরাধিকার সমগ্র মানবজাতি ।

কেউ যদি এসব সম্পদের অপব্যবহার করে তাহলে তা প্রতিহত করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হবে। কিন্তু এই যুক্তিতে মাত্র ১১ টি দেশ স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য রাশিয়া ও চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো এই চুক্তিতে অনুমোদন দেয়নি। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ কমপিটি টিভনেস অ্যক্ট’ নামের এক আইন পাস করে, যার ফলে মার্কিন নাগরিকরা মহাকাশের এমন যে কোন কিছুর মালিকানা নিতে পারবে যেখানে তারা পানি ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের জন্য খনন কার্য পরিচালনা করতে পারবে। তবে চাঁদকে এই আইনের আওতাভুক্ত করা হয়নি। ২০১৭ সালে লুক্সেমবার্গ মহাকাশে থাকা সম্পদের উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিতার একটি আইন প্রণয়ন করেন।

তবে জাতিসংঘের ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ চুক্তি অনুযায়ী চাঁদের জমি বিক্রি করা বা ক্রয়ের কোন অধিকার কারও নেই। তাই যারা চাঁদের জমি কিনেছে ভেবে উচ্ছ্বাসিত, উল্লাসিত ও আনন্দিত এটা শুধুই স্বপ্ন। চাঁদের জমি কিনা আর বাতাস কিনা একই রকম, শুধুই অর্থ অপচয়।

See also  টিকটক আইডির নাম নির্বাচন করবো কিভাবে?

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *