চেরি ফলের উপকারিতা এবং টবে চাষ পদ্ধতি
চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার, এই তিনটি দেশ প্রতিনিয়তই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও কূটনৈতিক রেষারেষি করেই চলছে। খুব সম্প্রতি এক নতুন বিতর্ককে কেন্দ্র করে মিডিয়া জগতকে তোলপাড় হয়ে উঠে। বিতর্কের আলোচ্য বস্তু…: ‘চেরি ব্লসম’ গাছের আদি উৎপত্তি কোথায়?
তাদের সকলেই দাবি করছে এই সুন্দর ফুলবিশিষ্ট গাছটির উৎপত্তিস্থল তাদের দেশই। তিন দেশের লোকেরাই এ ফুলের জন্য পাগল। এটা আসলে প্রধান সমস্যা না। গোল বাধে তখন, যখন দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয় যে, এ গাছের সবচাইতে বিখ্যাত প্রজাতিটির উদ্ভব দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু প্রদেশে। এর প্রতি উত্তরে জাপান জানায় এই ফল এর আদি উৎপত্তি যে জাপানেই তাঁর কোন সন্দেহ নেই।
অন্যদিকে চীন কি বসে থাকার মতো? চীন ও তাদের স্টেট্মেন্ট দিয়ে বলল “এই গাছের প্রকৃত উৎপত্তিস্থল চীনের হিমালয়সংলগ্ন অঞ্চলে। চেরি গাছের আদি উৎস কোথায় এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই এই তিন দেশের মধ্যে বিতর্ক চলছে। আর আশা ও করা যায় চলবে।
তবে যে দেশেই এই চেরি ফল এর পৈত্রিক নিবাস হোকনা কেন বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে তুর্কিতে সবচেয়ে বেশি ফলন হচ্ছে। তাঁরপর যুক্ত্রারাষ্ট্র এর পর ইরান। এই চেরি ফলের বানিজ্যিক চাষ বাংলাদেশ থেকে অনেকটা বিলুপ্তির পথেই ছিলো। এখন সেটি আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করছে।
পৃথিবীতে এই চেরি ফলের অস্বাভাবিক রকমের চাহিদা রয়েছে। তবে বাংলাদেশে এর ফলন ঐ পরিমান নেই বলে এতটা দেখা যায়না। সাধারনত মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারে চেরি ফলের প্রচুর ব্যাবহার হয়।
বাংলাদেশে কাপ্তাই চাদপুর এ সকল অঞ্চলে অনেক বেকার বাম্পার ফলন করে সফলতা অর্জন করেছে। এমনকি দেশের সকল জেলাতে এ ফলের ছাদ বাগানের বিপুল চাহিদা।
চেরি ফলের উপকারিতা
১) চেরিতে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
২) দেহে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়
৩) হৃদরোগ কমাতেও চেরি ফল সাহায্য করে।
৪) চেরি ফল নিয়মিত খেলে রক্তের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে।
৫) চেরিতে থাকা মিলাটোনিন নামক উপাদান দেহের রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।
৬) নিয়মিত চেরি খেলে ডায়বেটিক হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
৭) চেরিতে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।
৮) বাতের ব্যথা, মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে এই ফল সাহায্য করে।
বাসার ছাদে চেরি ফলের গাছ লাগানোর কার্যকরী উপায়
সতেজ উর্বর মাটি চেরি ফল চাষে উপযোগী

টবের মাটি প্রস্তুতিঃ
ছাদ বাগানে চেরি চাষের জন্য উপযোগী মাটি তৈরী করতে হলে, সবার আগে প্রয়োজন কোকোপিট |
মাটি প্রস্তুত এর জন্য নিম খোল, হারের গুঁড়ো , কোকোপিট এবং গোবর সার ভালো করে মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে| আপনি যদি মাটিকে উন্নত করতে পারেন তবে গাছ ও উন্নত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মাটি তৈরী সময় মাথায় রাখতে হবে, মাটি একটু শুকালেই জল দিতে হবে | জল কম হলে এই গাছে ফুল, ফল কিছুই হয়না |
যেই বিষয় গুলো অবশ্যই মানতে হবেঃ কোনো ছায়ায় গাছটি রাখা যাবেনা, সূর্যের আলোয় এই গাছ রাখা জরুরি | তবেই, গাছে ফুল আসবে |
সার প্রয়োগ ঃ
চেরি গাছে সময় মতো সার দেওয়া অতন্ত্য জরুরি নয়তো এই গাছের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হবেনা | কম্পোস্ট, কিছুটা হার গুঁড়ো এবং তার সাথে কলার খোসার গুঁড়ো ভালোভাবে মিশিয়ে সার তৈরি করে দিতে হবে। এখানে কলার খোসার গুঁড়ো পটাসিয়াম হিসাবে কাজ করবে | হারের গুঁড়ো থেকে চেরি গাছ ফসফরাস পেয়ে যাবে এবং মাথায় রাখতে হবে, সার প্রয়োগের সময় নাইট্রোজেনের পরিমান যেন কম থাকে নাহলে গাছে ফুল আসবেনা |
ফল সুমিষ্ট হয় বলে এই গাছে পোকা মাকড় এবং পিপড়ার আক্রমন হয়ে থাকে।
১০ দিন ছাড়া ছাড়া সর্ষের খোল পচা তরল সার হিসাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে | গাছ সুস্থ থাকার জন্য ১৫ দিন ছাড়া ছাড়া পেস্টিসাইড বা নিম তেল ও ব্যবহার করাতে পারেন |
চারা রোপণঃ
নার্সারি থেকে কোনো ভালো জাতের চেরি গাছ এনে টবের মাঝখানে ফাঁকা করে গাছটিকে বসাতে হবে | গাছ বসানোর পর মাটি ভর্তি করে জল দিয়ে দিতে হবে |
এভাবে উপযুক্ত ভাবে ছাদে চেরি গাছ রোপন করলে ভালো ফল আশা করা সম্ভব।