টাটা কোম্পানি

ভারতের টাটা কোম্পানির ইতিহাস

ভারতের আন্তর্জাতিক বানিজ্যের সফলতার পেছনে ভারতের যত কোম্পানির অবদান রয়েছে তার মধ্যে সিংহভাগ অবদান রেখেছে ভারতীয় কোম্পানি টাটা। আজকের এ পর্বে আমরা টাটা গ্রুপ সম্পর্কে বিশেষ কিছু তথ্য জানাব, যা আপনার ব্যক্তি জীবন এবং ব্যক্তি জীবনের বাহিরে সম্যক প্রভাব ফেলবে।

টাটা কোম্পানি

ভারতের টাটা কোম্পানির শুরুটা মোটেও ‍আর ১০ টা বিখ্যাত কোম্পানির মত এতটা ব্যাকআপ নিয়ে শুরু ছিল না। এই কোম্পানির গোরাপত্তন হয় ১৮৬৮ খ্রীষ্টাব্দে ভারতের মুম্বাই শহরে। এর ঠিক ১০ বছর ‍আগে ১৮৫৭ সালে হয় সিপাহী বিদ্রোহ, এতটা বৈরী পরিবেশ পরিস্থিতি এর মধ্যে একটা ব্যবসা শুরু করা ছিলো অত্যন্ত সাহসীকতাপূর্ন একটি পদক্ষেপ।

তখন সময়টা ছিল ব্রিটিশ ‍সরকারের অধীনে ‍শাসন, শোষন, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ‍সময়। ব্রিটিশ ‍সরকার কখোনই চাইতোনা এ অঞ্চল থেকে কোন উদ্যোক্তা তৈরি হোক। সিপাহী বিদ্রোহের পর তা কিছুটা কমলেও তার রেশ থেকেই যায়।

একটা বিষয় একটু ভেবে দেখুন তো, যখন একটা দেশের সরকার যদি কোন উদ্যোক্তাই না চায়, তখন আপনি কিভাবে ব্যবসা করতে পারবেন? শুরুতেই এই প্রতিকূল বিষয়কে ছাপিয়ে টাটা গ্রুপ এর ভিত্তি স্থাপন করেন জামসেদজি টাটা।১৮৬৮ সালে জামসেদজি টাটা রপ্তানি ব্যবসা শুরু করেন। তখন তার এই রপ্তানি ব্যবসা চীন, জাপান ও গ্রেট ব্রিটেনে এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, কয়েক বছরের ব্যবধানে দুটি টেক্সটাইল মিল দেন। জামসেদজি টাটার দর্শন ও চিন্তা-চেতনা ছিল সাধারন চিন্তা-ভাবনার চেয়ে কিছুটা আলাদা।

যেমন, তিনি ব্যবসার জন্য বিভিন্ন দেশে যেতেন বলে কোম্পানি পরিচালনার অনেক ট্যাকনিক রপ্ত করতেন এবং দেশে এসে তা নিজের কোম্পানিতে প্রয়োগ করতেন। যেমন অবসর ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি। তাছাড়া তিনি যখন দেখতে পেলেন ইউরোপে শিল্প-বিপ্লব এর সূচনা, তখন তিনি মনে মনে ঠিক করলেন ভারতে ও শিল্প-বিপ্লবের জন্ম দেবেন। তবে তা ব্রিটিশদের অধীনে নয় বরং তা হবে ভারতের নিজস্ব ‍শিল্প-বিপ্লব।

See also  বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসার জন্য কোন পণ্যগুলো ভালো হয় ২০২৫

জার্মানির আদলে তিনি ভারতে ১৯০১ সালে একটি স্টিল প্রোডাকশন প্ল্যান্ট তৈরি করেন। ১৯০৩ ‍সালে এই কিংবদন্তি প্রয়াত হলে এই কোম্পানির হাল ধরেন তার দূরসম্পর্কের ভাই জাহাঙ্গির টাটা। যিনি জেআরডি টাটা নামে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ভারতীয় ইতিহাসে প্রথম পাইলট এ মানুষটি। পাইলট হিসেবে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই লক্ষ্য স্থির করেন টাটা এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠা করার।

১৯৩২ সালে তিনি সেই লক্ষ্য পূরণ করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি টাটার অধীনে কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে দাড়িয়েছিল ৯৫ এর কোঠায়। ১৯৪৫ সালে টাটা মোটর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ‍বিশ্ব ব্যাপি বিপুল পরিমানে সুখ্যাতি অর্জন করে। ৫২ বছর নেতৃত্বের পর ১৯৯১ সালে নেতৃত্বে আসেন রতন টাটা। রতন টাটা যখন নেতৃত্বে আসেন তখন ‍কোম্পানির মার্কেট ‍শেয়ার ছিল মাত্র ৩ পার্সেন্ট। নেতৃত্বে আসার কয়েক বছরের মধ্যে এই শেয়ার উন্নিত হয়ে দাড়ায় ২০ পার্সেন্ট এ।
এভাবে এখন টাটা ভারতীয় কোম্পানি হলেও তাদের আয় হয় সারা বিশ্ব থেকে। পুরো টয়োটা, কোকাকোলা, ফেসবুক, মাইক্রোসফট এবং গুগলের কর্মচারীর সংখ্যা যোগ করলেও তাদের কর্মচারীর সংখ্যার সমান হবে না। বর্তমানে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার কর্মী কাজ করছে এই কোম্পানিতে। সাহসী এবং সময়োপযোগী দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ‍আমাদের ক্যারিয়ার কিংবা ব্যক্তিজীবন, উভয়ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। টাটা পরিবারের অগ্রগামীদের মধ্যে তা ছিল বলেই আজ বিশ্বে টাটা এক আস্থার নাম।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *