ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা
|

কিভাবে একটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা শুরু করা যায়?

বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের  লাভজনক ব্যবসা রয়েছে। তার মধ্যে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা অনেক জনপ্রিয়। এটাকে এয়ার টিকেটিং ব্যবসাও বলা হয়ে থাকে। মূলত ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে।

আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক  ভ্রমন পিপাসু মানুষ রয়েছে। তারা দেশ থেকে দেশের বাইরে ট্যুর করতে ভালবাসেন। এক্ষেত্রে তারা ঝামেলামুক্ত ভাবে সকল বিষয় বন্দোবস্ত করতে চান।

সেক্ষেত্রে  ট্রাভেল ম্যানেজমেন্ট বা ভ্রমনের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন বিষয় গুলো চলে এসে।এ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করেই ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা শুরু করা হয়। যেমন, বর্তমান সময়ে, কর্মব্যস্ততার ফলে মানুষ ভ্রমনের জন্য টিকেট বুকিং, খাবারের ব্যবস্থা, যাতায়াত সহ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ঝামেলায় যেতে চায়না। যার ফলে অনেকেই সহজ রাস্তা খুঁজে।

মানুষের এ চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে গড়ে ওঠেছে ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা। এরজন্য আপনাকে  সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে।

 আজকের আর্টিকেলে, ছোট আকারে বা বড় আকারের, কিভাবে ছোট বা বড় আকারের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করা যায় সে সম্পর্কে বলবো। চলেন শুরু যাক-

ট্রাভেল এজেন্সি বা এয়ার টিকেটিং ব্যবসা আসলেই কি?

কাজের ধরণ এবং পরিষেবার ভিত্তিতে ট্রাভেল এজেন্সি অনেক রকম হতে পারে। আবার বিভিন্ন রকম কাজ এবং পরিষেবা নিয়ে একটা ট্রাভেল এজেন্সি হতে পারে।

এক্ষেত্রে এটা সাধারণত দুভাগে বিভক্ত। যেমনঃ ছোট পরিসরে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা এবং বড় পরিসরে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়।

ছোট আকারের ট্রাভেল এজেন্সি সাধারণত টিকেট কেনাবেচা এবং এ জাতীয় কাজ করে। কোন ছোট পরিসরের সংস্থা একটি পরিষেবা নিয়েও কাজ করতে পারে।

যেমনঃ কেউ শুধু বাস/ট্রেন বা বিমানের টিকেট বিক্রি করে অথবা শুধু ট্যুর প্যাকেজ বিক্রি করে।

কেউ আবার দুইটি বা ততোধিক পরিসেবা নিয়ে কাজ করে। যেমনঃ বাস/ট্রেন/বিমানের টিকেটের পাশাপাশি ট্রাভেল প্যাকেজ, হোটেল বুক বা ট্যুর অর্গানাইজ করে।

আর বড় পরিসরে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা যারা করে তারা বাস, ট্রেন বা বিমানের টিকেট বুকিং, খাবারের ব্যবস্থা করা, ঘুরার জন্য প্লেস নির্ধারণ করা, হোটেল বুকিং সহ যাবতীয় কাজ করে থাকে।

See also  কাপড়ের ব্যবসার আইডিয়া, অনলাইন এবং অফলাইন কাপড়ের ব্যবসা করে কোটিপতি!

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করতে হলে অবশ্যই কিছু পদ্ধতি মেনেই তারপর শুরু করতে হবে। নিচে সেগুলো সম্পর্কে বলা হলঃ

১)ধীরস্থিরতার সাথে পরিকল্পনা করুন-

যেকোনো ব্যবসায় করার পূর্বে সঠিক পরিকল্পনা করা জরুরি।ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করার জন্য আপনি যদি মনস্থির করে ফেলেন। প্রথমে তাহলে আপনার কাজ হল সঠিক পরিকল্পনা করা। পরিকল্পনা ছাড়া সঠিক ভাবে কোন কিছু করা সম্ভব না।

প্রাথমিকভাবে ছোট পরিসরে  ব্যবসাটি শুরু করা অনেক নিরাপদ। কারণ এক্ষেত্রে মূলধনের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তবে  প্রায় এক লক্ষ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে এ ব্যবসায় নামার জন্য যথেষ্ট।

আর আপনি যদি বড় পরিসরে ব্যবসাটি শুরু করতে  চান, তাহলে ১০ লক্ষ বা তার অধিক টাকা নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

তবে আপনার যদি এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান না থাকে, তাহলে আপনি ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে যখন অভিজ্ঞতা হবে, তখন আপনি চাইলে বড় পরিসরেও বিনিয়োগ করতে পারবেন।

আপনি প্রথমে শুধু পরিসেবা দিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। যেমন সেটা ক্রেতাদের টিকেট বুকিং বা হোটেল বুকিং দেওয়া ইত্যাদি।

এরপর আপনাকে একটি ছোট রুমের অফিস নিতে হবে এবং সুন্দরমতো ডেকোরেশন করতে হবে। এছাড়া, অফিসের কাজের জন্য কম্পিউটার, নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ব্রডব্যান্ড লাইন নিতে হবে।

২)ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায় লাভজনক ক্ষেত্রগুলো এবং আপনার সিদ্ধান্ত-

ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ের কিছু দিক সম্পর্কে পূর্বে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছি। এখন আপনি যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে, প্রথমদিকে শুধুমাত্র একটি  পরিসেবা নিয়ে কাজ করবেন। তাহলে আপনি ট্যুর প্যাকেজ বিক্রয়ের ব্যবসায়টি করতে পারেন।

এটা বেশ মজাদার কাজ। ক্রেতাদের ভ্রমণের যাবতীয় কাজ যেমনঃ কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার জন্য জায়গা বা প্লেস নির্ধারণ, টিকেট বুকিং করা। হোটেল নির্বাচন ও থাকার যাবতীয় ব্যবস্থা ইত্যাদি করা সব কিছু মিলিয়ে ন্যায্য মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে নেয়া হয়।

See also  অল্প পুঁজি নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?

তবে এরজন্য আপনাকে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান বা জায়গা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। যেহেতু আপনি নতুন সেহেতু প্রাথমিকভাবে আপনি অল্প কিছু জায়গা নির্বাচন করুন। এর ফলে কাজ করাটা অনেক সহজ ও উত্তম হবে আপনার জন্য।

এছাড়া আপনি চাইলে  ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের জন্য শুধুমাত্র টিকেট ক্রয় করেও ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কারণ বর্তমানে মানুষের ব্যস্ততা অনেক বেড়ে গেছে। যারফলে, অনলাইনে টিকেট বুক করাটাও,অনেকের কাছে বেশ ঝামেলার কাজ মনে হয়।

আপনি চাইলে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন।

তাছাড়া হোটেল বুকিং করেও আপনি ব্যবসাটি করতে পারেন। তবে আপনাকে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলতে এবং কমিশনের ভিত্তিতে পর্যটকদের জন্য হোটেল বুক করে লাভবান হতে পারেন।

আবার আপনি পর্যটকদের সাথে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলোতে তাদেরকে ঘুরে দেখাতে পারেন। এককথায় ট্যুরিস্ট গাইড। তাই আজই থেকে ভাবা শুরু আপনি কোন ক্ষেত্রে নিয়ে কাজ করতে বেশি আগ্রহী।

৩)ব্যাংকে এ্যাকাউন্ট তৈরি করা-

ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আপনাকে ব্যাংকে একটি কারেন্ট এ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংক বা অগ্রণী ব্যাংকে আপনার এ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

তবে আপনি যদি  বড় পরিসরে শুরু করতে  চান বা  আপনার ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা  ক্রমে বড় এবং ভাল পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে তার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবেঃ

রেজিস্ট্রেশন করা-

আপনার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায় রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করতে আনুমানিক ২০০/- থেকে সর্বোচ্চ ২৫,০০০/- টাকা লাগতে পারে।

তবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেভেদে ফি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়সের যে কেউ তার ব্যবসায়ের ট্রেড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবেঃ

১. ভাড়ার চুক্তিপত্র

২. ভাড়ার রশিদ

৩. তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

৪. সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি।

প্রথমে কর কর্মকর্তার বরাবর কর পরিশোধের রশিদ সহ আবেদন করতে হয়।

এক্ষেত্রে মনে রাখা জরুরি যে, আপনি যে অঞ্চলের, সে অঞ্চল থেকে ১০/- টাকা বা তার চেয়ে কিছু বেশি টাকা দিয়ে আবেদন ফর্ম নিয়ে উপরোক্স ডকুমেন্টগুলো সাথে ছবিসহ জমা দিতে হবে। আপনাকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে।

See also  ভারতের টাটা কোম্পানির ইতিহাস

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন-

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অনলাইন সাইট থেকে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম ডাউনলোড করে তা পূরণ করে জমা দিতে হবে। আপনাকে এর সাথে আর যা যা জমা দিতে হবেঃ

১. TIN Certificate,

২. মূলকপি ট্রেজারি চালানের,

৩. যদি প্রয়োজন হয় তাহলে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি,

৪. ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি,

৫.  নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মাত্র ৩০০টাকার হলফনামা,

৬. হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ,

৭. নূন্যতম দশ লক্ষ টাকার স্থিতি ব্যাংক সার্টিফিকেট,

৮. রেজিস্ট্রেশন ফি এবং VAT জমার ট্রেজারি চালানের মূলকপি

এক্ষেত্রে, আবেদন ফি বাবদ লাগতে পারে  পাঁচ হাজার টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকার মতো। এটা সাধারণত হবে যখন ব্যবসার পরিধি বড় হবে।

আপনার ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় যদি কোন অংশীদারি থাকে তাহলে অতিরিক্ত সত্যায়িত সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন ফটোকপি, আর্টিকেল অব এসোসিয়েশন লাগবে।

প্রাথমিকভাবে আপনি কোনো হোটেল প্রতিনিধি, টিকেট সেলার কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে একা অথবা সাথে কয়েকজনকে নিয়ে তাদের এজেন্ট হিসেবে নিবন্ধন করে। স্বল্প খরচে এ কাজটি শুরু করতে পারেন ।এক্ষেত্রে আপনি কোম্পানি থেকে সাধারণত বেশ ছাড় পাবেন, যা আপনার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

পরবর্তীতে যখন ব্যবসায়ের পরিধি বাড়বে তখন আপনার ব্যবসাটি  বাংলাদেশের ট্যুরিজম বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলতে পারবেন।

পরিশেষেঃ

বর্তমানে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা বেশ চাহিদাসম্পন্ন ও একটি লাভজনক ব্যবসা। লাভজনক ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই আপনার সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং ধৈর্য্যর সাথে কাজ করতে হবে। আশা করি, সফলতা আপনার কাছে ধরা দিবেই।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *