ইলিশ মাছ

পদ্মার ইলিশ মাছের বৃত্তান্ত

“পদ্মার ইলিশ সোনালী, মাছে ভাতে বাঙ্গালি”

এই প্রবাদ্দ্বয়ের সাথে পরিচয় নেই এমন বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাছাড়া ইলিশ বাঙ্গাদেশের জাতীয় মাছ। বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য ভাত আর এর সাথে খাওয়া হয় মাছ। আসলে এটাই বাঙ্গালীদের কালচার বা কৃষ্টি।আর আমরা এই কৃষ্টির সাথে এতটাই ওতপ্রোতভাবে মিশে আছি যে, মাছে ভাতে ছাড়া বাঙ্গালি বলা যাবেনা আর বাঙ্গালী হলে মাছ ভাত ছাড়া চিন্তাই করা যায়না।
তাই সকলেই জানে।পহেলা বৈশাখ মানে পান্তা ভাত, ইলিশ ভাজা আর মরিচ পোড়া। এই ইলিশ সম্পর্কে আজকে আপনাদের এমন কিছু তথ্য জানব যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজে লাগবে, আর যদি যেনেই থাকেন তবে আরোএকবার পোক্তভাবে পরিষ্কার হয়ে নিন। ইলিশ এমন একটি সুস্বাদু মাছ যা বাংলাদেশে তো বটেই সারা বিশ্বে এর ব্যপক রকমের চাহিদা রয়েছে। তবে এই ইলিশ শধু বাংলাদেশেই ধরা হয়না ইন্ডিয়া, চায়না ও এই ইলিশ মাছ সমুদ্র থেকে উত্তোলন করে থাকে। তবে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এবং বিশ্বব্যাপি সমাদৃত।

ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম টেনুয়ালোসা ইলিশা। সারা বিশ্বে সর্বমোট ছয় প্রজাতির ইলিশ মাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এর মধ্যে বাংলাদেশেই রয়েছে তিন প্রজাতির ইলিশ। সেগুলো হচ্ছে হিলসা শ্যাড (টেনুয়ালোসা ইলিশা), কেলি শ্যাড (হিলসা কেলি) এবং টোলি শ্যাড (টেনুয়ালোসা টোলি)। আমরা সকলেই কমবেশি জানি, জীববিজ্ঞানের বাস্তুসন্থানে সাধারণভাবে প্রচলিত আছে, বড় মাছ ছোট মাছকে খায়। কিন্তু এই ইলিশ মাছের উপর গবেষণাটিতে দেখা যায় যে, এই মাছের খাদ্যতালিকার ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশই উদ্ভিদকণা।

ইলিশ মাছ কেন নদীতে আসেঃ

মূলত প্রজননক্ষম ইলিশ মাছগুলি প্রজননের জন্যে সমুদ্র থেকে মিঠাপানির নদ-নদীতে ডিম ছাড়তে চলে আসে।

ইলিশ মাছের ডিম পাড়ার সময়কালঃ

বছরে দু’বার ইলিশ ডিম দেয়। অধিকাংশ ইলিশ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এবং কিছু ইলিশ ফেব্রুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল মাসে ডিম ছেড়ে থাকে। প্রতিটি মা ইলিশ প্রতি মৌসুমে সর্ব্বোচ্চ ১ থেকে ২.৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ১০ থেকে ২৩ লক্ষ পরিমাণ ডিম পাড়ে।

See also  স্বল্প পুঁজির কবুতর পালন পদ্ধতি ও লাভ ক্ষতির হিসাব জেনে নিন!

ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সময় যে কারনে মিঠা পানিতে আসেঃ

সমুদ্রের নোনা জল থেকে ইলিশ যতো নদীর উজানের দিকে যেতে থাকে ততো তার শরীর থেকে ততো তেল ও লবণ ঝরতে থাকে বা কমতে থাকে। নদীর মিঠা পানিতে ইলিশ যত বেশি থাকে ততোই কমে তার দেহের চর্বি এবং খনিজ লবন তাই বাড়তে থাকে স্বাদও। তাই নদীর ইলিশের তুলিনায় সমুদ্রের ইলিশের স্বাদ কম। পদ্মার ইলিশের স্বাদ অতুলনিয় এবং সার বিশ্বে বিখ্যাত।

আমরা তো প্রায় সকলেই কম বেশি ইলিশ মাছ কিনে থাকি, কিন্তু আমি বা আপনি কি হলফ করে বলতে পারব? প্রকৃত ইলিশ মাছ ই কিনেছি বা উৎকৃষ্ট মানের ইলিশ মাছ ই কিনতে পেরেছি!
আপনি এত টাকা দিয়ে বিলাশবহুল মাছ কিনবেন আর তা প্রকৃতভাবে না চিনে কিনবেন, তা হয়না।

ভালো ইলিশ মাছ চেনার উপায়ঃ

খালি ইলিশ মাছ চিনলেই হবেনা। চিনতে হবে ভালো জাতের ইলিশ মাছ। নদীর ইলিশে চকচকে ভাবটি বেশি হবে এবং গায়ের রং বেশি রুপোলি হবে । সাগরের ইলিশ মাছে উজ্জ্বলতা কম থাকবে। পদ্মা-মেঘনা অববাহিকার ইলিশ মাছের আকার হবে পটলের মতো অর্থাৎ মাথা আর লেজ সরু আর পেট এর আকৃতি হবে মোটা। হিমঘরে রাখা ইলিশ মাছের চোখ ভিতরের দিকে ঢুকে থাকবে এবং ঘোলাটে দেখাবে।

ভালো ইলিশ চেনার উপায়

আসুন যেন নেই ইলিশ মাছের উপকারিতা

১.ইলিশ মাছ খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে।
২.মস্তিষ্কের গঠন ভালো হয়।
৩.রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪.বাত বা আর্থারাইটিস কম হয়।
৫.ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারও কম হয়।

ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতাঃ

মাছের ডিমে উপস্থিত স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলো রক্ত পরিষ্কার, হিমোগ্লোবিন বাড়ানো ও অ্যানিমিয়া থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক। তাছাড়া , হাড় শক্ত করতে, দাঁতকে মজবুত এবং ভালো রাখতে সাহায্য করে মাছের ডিমে থাকা ভিটামিন-ডি।

ইলিশ মাছের অপকারিতাঃ

যে কোন জিনিস অতিরিক্ত মানেই ক্ষতিকর। তেমনি আপনি যদি সবসময় ইলিশ মাছ খেয়ে থাকেন তবে এর অপকার দিকগুলো জেনে নিন।
আর যদি মাত্রারিক্ত না খেয়ে থাকেন তবে আপনি ঝুকি থেকে মুক্ত তবে জেনে রাখা উত্তম।
এই মাছ কিছুটা এলার্জিক। গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের জন্য ইলিশ মাছ খাওয়ার বারন। যারা মাছের কাটা অপছন্দ করেন তাদের জন্য বলছি, ইলিশের কাটা প্রচুর তবে যারা ইলিশের কাটাকে জয় করতে পেরেছে তারা জানে প্রকৃত ইলিশের স্বাদ।

See also  বাড়িতে সহজ পদ্ধতিতে আপেল চাষ করুন

 ইলিশ মাছ কত ইঞ্চির নিচে হলে জাটকা বলা হয়?

ইলিশের পোনাকে জাটকা বলা হয়। সাধারনত পোনা এর সাইজ ১০ ইঞ্চি-২৫ সেন্টিমিটার এর নিচে হয়। জাটকা নির্বিচারে ধরা হলে ইলিশের উত্পাদন কমে যায়। জাটকা নদ-নদীতে বিচরণ করে।

ইলিশ মাছ ধরা ও সংরক্ষণ আইনঃ

নির্বিচারে পোনা মাছ ও প্রজননক্ষম মাছ নিধন মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধির অন্তরায়। এ সমস্যা দূরীকরণের জন্য সরকার মাছের আকার, প্রজনন ও বৃদ্ধির সময়, বিচরণক্ষেত্র ইত্যাদি বিষয়ে কতিপয় বিধি নিষেধ আরোপ করে, ১৯৫০ সলে এ আইন প্রণয়ন করেন ।
মত্স্য সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ইলিশ এর জাটকা ধরা, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং বিপণন দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন অনুযায়ী নয় ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা ইলিশকে জাটকা হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রথমবার কেউ এই আইন অমান্য করলে এক থেকে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা একই সাথে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
কিন্তু দ্বিতীয়বার কেউ একই অপরাধ করলে আইনে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণের বিধান রাখা হয়েছে।
জেল হতে পারে ১ বছর বা তার সাথে ২০০০ টাকা আর্থিক জরিমানা।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *