প্রসেসর কি এবং এর কাজ কি? জেনে নিন বিস্তারিত
বর্তমানের ডিজিটাল যুগে বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট ছাড়া চলার কথা আমরা কল্পনাও করতে পারিনা। মূলত কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের উন্নয়নের সাথে সাথেই পৃথিবীতে যুগান্তকারী পরিবর্তন চলে আসে। আর এই কম্পিউটারের মস্তিস্ক হল প্রসেসর।
আধুনিক যুগে প্রসেসরের ব্যবহার শুধু কম্পিউটারেই সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রায় সব ধরনের ডিভাইসে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। আসুন জেনে নেই প্রসেসর কি এবং এর কাজ কি, যার সাহায্যে পুরো পৃথিবীর ভাগ্য ঘুরে গিয়েছে।
প্রসেসর কি?
প্রসেসর কি তা সহজ করে বলতে গেলে বলা যায়, যা প্রসেসিং-এর কাজ করে তাই-ই প্রসেসর। তো কি জিনিস প্রসেসিং করে? আমরা কি যে কোন প্রক্রিয়াজাতকরন যন্ত্রকেই প্রসেসর বলব?
প্রথমত, কোন তথ্য বা উপাত্তকে প্রক্রিয়াজাত করে তার ফলাফল প্রকাশ করে প্রসেসর।
দ্বিতীয়ত, যে কোন প্রক্রিয়াজাতকরন যন্ত্রই প্রসেসর নয়। কারন প্রসেসর বলতে কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ব্যবহৃত প্রসেসর কেই বুঝায় যেটি বিভিন্ন তথ্য প্রসেসিং করে, কোন বস্তু নয়।
এখন আসি মূল সংজ্ঞায়। প্রসেসর হল এমন একটি চিপ (electrical chip) যার সাহায্যে কম্পিউটার মূল কাজ সম্পাদন করে। এটিকে কম্পিউটারের ব্রেইনও বলা হয়ে থাকে। কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরন ইউনিটের (CPU) প্রধান অংশ এটি।
প্রসেসর মানুষ বা ইউজার এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে মূল ভূমিকা রাখে। ইউজার যা চাইছে, প্রসেসর তা এনে দেয় আউটপুট এর মাধ্যমে। যে প্রসেসর যত ক্ষমতাসম্পন্ন, সেই প্রসেসর তত দ্রুত কাজ সম্পাদন করে।
প্রসেসর কত প্রকার?
আপনি যেকোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস কিনতে গেলে প্রথমেই এর কার্যক্ষমতা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। আর তা জানতে প্রসেসসরের ক্ষমতা জানতে হবে।
প্রসেসরের স্পীড মাপার একক হল গিগাহারটজ (GHz)। একটি প্রসেসরের ক্ষমতা কত GHz তা জানতে এর কোর (Core) কত তা দিয়ে বুঝা যায়। সে অনুযায়ী প্রসেসরের প্রকারভেদ করা হয়। যেমনঃ
১। ডুয়াল কোর প্রসেসর (Dual Core) – ২টি কোর আছে।
২। কোয়াড কোর প্রসেসর (Quad Core) – ৪টি কোর আছে।
৩। হেক্সা কোর প্রসেসর (Hexa Core) – ৬টি কোর আছে।
৪। অক্টা কোর প্রসেসর (Octa Core) – ৮টি কোর আছে।
৫। ডেকা কোর প্রসেসর ( Deca core) – ১০টি কোর আছে।
প্রসেসরের কাজ কি?
সংক্ষেপে বলতে গেলে, প্রসেসরের কাজ হল, ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে আমাদের নির্দেশনা গ্রহন করে এবং আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে।
যেকোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস গানিতিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে। এখন এইসব সংখ্যা আবার মানুষের বোধগম্য নয়। একটি ইলেক্ট্রনিক গ্যজেটে কাজ করার প্রক্রিয়াকে খুবই সহজ ও দ্রুত করে উপস্থাপন করে তার প্রসেসর।
সুতরাং, প্রসেসরের কাজ হল-
১। মানুষ ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে দোভাষীর কাজ করা।
২। ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কম্পিউটারের ভাষায় রুপান্তর করা। কাজের এই পর্যায়কে ফেচ (Fech) বলা হয়।
৩। ইউজারের নির্দেশনা মোতাবেক কম্পিউটারের অন্যান্য অংশকে কাজের নির্দেশনা প্রদান করা। এটি ডেকোড ( Decode) হিসেবে পরিচিত পর্যায়।
৪। বিশ্লেষিত তথ্য মানুষের ভাষায় রুপান্তর করে তা আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে ইউজারকে প্রদর্শন করা। এটি হল প্রসেসরের কাজের শেষ স্তর যা এক্সিকিউট (Exexcute) নামে পরিচিত।
প্রসেসরের কাজ আরও সহজভাবে বুঝতে হলে একে মানুষের ব্রেইনের সাথে তুলনা করা যায়। মানুষের মস্তিস্ক শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সংযোগ স্থাপন করে, নির্দেশ প্রদান করে, নিয়ন্ত্রণ করে। তেমনি কম্পিউটার, মোবাইল বা অন্যান্য গ্যাজেটের প্রসেসর তার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, ইনপুট দেয়া তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে কম্পিউটারের ভাষায় রুপান্তর করে। তারপর তা বিশ্লেষণ ও নির্দেশনার মাধ্যমে ফলাফল বের করে আবার মানুষের ভাষায় রুপান্তর করে আউটপুট ডিভাইসের মাধ্যমে প্রদর্শন করে।
মোবাইল ও কম্পিউটার প্রসেসরের মধ্যে কি কি পার্থক্য আছে?
স্বাভাবিকভাবেই মোবাইলের প্রসেসরের চেয়ে কম্পিউটারের প্রসেসরের ক্ষমতা বেশি। বর্তমানে মোবাইল কোম্পানিগুলো তাদের প্রসেসরকে শক্তিশালি ও অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন করার প্রতিযোগিতা করছে। তবে বাজারে টিকে থাকার জন্য কম্পিউটার প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোও বসে নেই।
একটি মোবাইল ও কম্পিউটারের প্রসেসরে মধ্যে আকৃতিগত, ক্ষমতা ইত্যাদির পার্থক্য থাকে। নিচে পার্থক্যগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১। আকৃতিঃ মোবাইলের তুলনায় কম্পিউটার প্রসেসর বড় আকৃতির। কম্পিউটারের ক্সজের পরিধি বেশি তাই এর প্রসেসর তুলনায় বড় হয়।
২। ক্ষমতাঃ এদিক থেকেও কম্পিউটারের প্রসেসর এগিয়ে। কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতা মোবাইলের চেয়ে অনেক বেশি, কারন এর প্রসেসর হয় অধিক শক্তিশালী। কম্পিউটার একসাথে অনেক কাজ করতে পারে, এখানে মোবাইলের ক্ষমতা তুলনামুলকভাবে সীমিত।
৩। স্পীডঃ কম্পিউটার মোবাইলের চেয়ে দ্রুত সময়ে অনেক বড় বড় ও জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে।
৪। বৈদ্যুতিক শক্তি খরচঃ যেহেতু কম্পিউটারের কাজ ও শক্তি বেশি তাই এর জন্য বিদ্যুৎ খরচও বেশি। অন্যদিকে মোবাইলের প্রসেসর অল্প বিদ্যুৎ খরচ করে।
৫। সিলিকনের ব্যবহারঃ যেহেতু মোবাইলের প্রসেসর ছোট ও অল্প জায়গা নেয় তাই এতে সিলিকনের ব্যবহার কম। আর কম্পিউটারে সিলিকনের ব্যবহার স্বাভাবিকভাবে বেশি।
প্রসেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানঃ
জনপ্রিয় কয়েকটি প্রসেসর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলঃ
১। ইনটেল ( Intel)
২। এএমডি ( AMD)
৩। কোয়ালকম (Qualcom)
৪। স্যামসাং (Samsung)
৫। মিডিয়াটেক (MediaTek)
৬। আইবিএম (IBM)
৭। হুয়াওয়ে (Huawei)
৮। এনভিডিয়া (nVidia)
শেষ কথাঃ
প্রসেসর কি এবং এর কাজ কি তা জানার পর আমরা নিশ্চয়ই এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছি। যেকোনো ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ক্রয়ের সময় তাই এর প্রসেসরের ক্ষমতা ও অন্যান্য দিক দেখে নেয়া জরুরি।
প্রসেসরের ক্ষমতা, কাজের উপর নির্ভর করে এর দাম নির্ধারণ হয়। আপনারা কোন গ্যাজেট কেনার পূর্বে তাই এর প্রসেসরটি যাচাই করবেন অবশ্যই। তবে প্রসেসর একা কাজ করতে পারেনা। এটি র্যাম এর সাহায্যও নেয়। তাই র্যাম এর ধারন ক্ষমতাও দেখা জরুরি।

Bachelor of Business Administration,
East West University