বি-২ স্পিরিট-বোমারু বিমান

একের পর এক পাল্লাদিয়ে আধুনিকায়ন হচ্ছে যুদ্ধে শত্রুকে পরাভূত করার টেকনলোজি। যেই দেশের টেকনলোজি যত উন্নত সেই দেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় তত বেশি শক্তিশালী। আর যেই দেশ যত বেশি শক্তিশালী সেই দেশকে অন্যান্য সকল দেশ সমীহ করে চলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কেন বা কি কারনে অন্যান্য দেশের ‍ঘুম হারাম হয়, যখন একটি দেশ নতুন কোন যুদ্ধ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ?
আসুন তবে জেনে নেই এমন একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা টেকনলোজী সম্পর্কে যা বর্তমানে শত্রুপক্ষের ঘুমকে রীতিমত হারাম করে দিতে বাধ্য।

বি-২ স্পিরিট. এটি মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের অসম্ভব ভারী বোমারু বিমান। যেটি স্টেল্থ বোম্বার নামে ও বিভিন্ন দেশে সুপরিচিত। যার অর্থ দাঁড়ায় চুরি করে বোম মারতে পারে যে, মানে গুপ্ত বোমা বিষ্ফোরনকারী। মার্কিনিরা এই বিমান তৈরি করলেও এর বড় একটি ক্রেডিট যায় জার্মানের কাছে। কারন এই আঙ্গিকের বিমান ১৯৪৪ সালে একমাত্র জার্মানির কাছেই ছিল যার নাম ছিল হর্টেন হো ২২৯।
তবে সময়ের সাথে এর ব্যাপক নতুনত্ব যুক্ত হয়েছে বি-২ স্পিরিটের মধ্যে।

কাউকে কিছু না জানিয়ে শত্রুপক্ষের গুরুত্বপূর্ন সকল ঘাটিতে দিব্যি বোমা বিষ্ফোরন তান্ডব চালাতে পারবে তাও ঘন্টার পর ঘন্টা।
আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, উরন্ত অবস্থাতেই এই যুদ্ধ বিমান ফুয়েল রিফিল করতে পারবে যা পৃথিবীর আর কোন বিমানের পক্ষে তা করা এখনো সম্ভব হয়নি।

বি-২ স্পিরিট প্রকল্পের নির্মান কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে। তখন এর নাম ছিলো এটিবি (মানে অ্যাডভান্স টেকনলোজি বোম্বার) এবং এটি তৈরির খরচ অত্যধিক উচ্চ হবার কারনে ১৩২ বিমানের পরিবর্তে মাত্র ২১ টি বিমান বানাতে সক্ষম হয়েছে যার গড় খরচ হচ্ছে ৭৩.৭ কোটি মার্কিন ডলার। তার মধ্যে ২০টি সক্রিয় আছে আর ১ টি ২০০৮ সালে এক মিশনে যাবার উড্ডয়নের সময়ই ক্র্যাশ হয়ে যায়।

See also  বিস্ময়কর মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

এই বিমান সবচেয়ে বিশেষ দিক হলো শত্রুপক্ষের ঘাটিতে এই বিমান রাডার ফঁকি দিয়ে অনায়েশে হামলা করতে পারে। কারন এই বি-২ স্পিরিট বিমান ৫০ হাজার ফুট (১৫ কি.মি.) উচ্চতা দিয়ে উড়তে পারে যা শনাক্ত করা রাডারের পক্ষে বেশ কঠিন।

এটি সর্বোচ্চ ৭৫,৭৫০ লিটার ফুয়েল নিয়ে ঘন্টায় ১০০০ কি.মি. গতিতে প্রায় ১১০০০ কি.মি. দূরে গিয়ে অনায়েশে অপারেশন চালাতে সক্ষম। এতে ২ জন পাইলট বসতে পারে এবং এই বিমানের ভেতরে মিনি কুকিং সিস্টেম রয়েছে। পাইলটরা আকাশে উড়তে উড়তে যদি খিদা লেগে যায় তবে বিমানে বসেই হালকা পাতলা খাবার রান্না বা গরম করে খেয়ে নিতে পারবেন।

বি-২ স্পিরিট বিমানে প্রায় ২০- ২৩ টনের বিভিন্ন বোমা বহন করা যায়। এর মধ্যবর্তী অংশে অনেকগুলো ফায়ার উইপন রয়েছে যা এর ডানা দ্বারা ঢাকা থাকে। এর টার্গেট একুরেসির জন্য মার্কিন নৌ ও বিমানবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে Joint Direct Attack Munition (JDAM) নামক ২৫ হাজার ডলার মূল্যের জিপিএস গাইডেন্স কিট বানায় যেটি এতটাই একুরেসি সম্পন্ন যে টার্গেট যদি মিস ও হয়ে যায় তবে তা পরবে টার্গেটের ৭ মিটার আশেপাশে।

২০১১ সালে আল কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেন অপারেশন ডাউনে প্রথমে ৩২টি JDAM অথবা একটি MoP বাংকার ব্লাস্টার বোমা ফেলার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু নিরীহ পাকিস্তানি বেসামরিক লোকজন মারা যাওয়ার আশঙ্কায় সেটি বাতিল করে দেয়া হয়।

তবে বর্তমানে বিশ্বে এটিই একমাত্র অত্যধিক ক্ষমতা সম্পন্ন বোমারু বিমান। যাকে প্রতিযোগীতা করার মত আর কোন বিমান এখনো আবিষ্কার হয়নি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *