মঙ্গল গ্রহ
| | |

বিস্ময়কর মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

মঙ্গল গ্রহ… এক রহস্যময় গ্রহ যা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা যুগের পর যুগ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধানের সন্ধানে।

কি আছে মঙ্গল গ্রহে? এর আবহাওয়া, মাটি, বায়ুমন্ডল, আকাশমন্ডল, ভূপৃষ্ঠে-পাতালে কি আছে? এখানে প্রানের অস্তিত্ব সম্ভব কি না, এটি মানুষের বসবাসের যোগ্য কি না… ইত্যাদি নানা বিষয়ে জানতে কৌতূহলী বিজ্ঞানিরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। 

আজ আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি মঙ্গল নিয়ে বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এমন কিছু তথ্য যা হয়তো অনেকেই জানেন না। 

ভারত উপমহাদেশে ‘মঙ্গল’, ইংরেজিতে ‘মার্স’ (Mars)- নামে পরিচিত গ্রহটির নামকরনেও রয়েছে ইতিহাস। 

  • মঙ্গল- নামটি এসেছে এক হিন্দু গ্রহদেবতার নামানুসারে। 
  • ‘Mars’- এসেছে গ্রীক ও রোমান যুদ্ধ দেবতা Mars এর নামানুসারে।
  • এছাড়া প্রাচীন ব্যাবিলনেও তাদের যুদ্ধদেবতা ‘Nergal’ এর নামানুসারে মঙ্গলকে Nergal নামে অভিহিত করা হত। 

‘লাল গ্রহ’ বা ‘Red Planet’ নামেও এটি পরিচিত। ফেরিক অক্সাইড বা আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের কারনে এই গ্রহকে লালচে দেখায়। লাল হল রক্তের রঙ। তাই একে শক্তিশালী যুদ্ধদেবতার সাথে মিলিয়ে নামকরন করা হয়েছে।

মহাকাশ নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থাগুলো বিভিন্ন গবেষণা ও অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এই গ্রহের রহস্যভেদ করতে। তার মধ্যে National Aeronautics and Space Administration (NASA)) কাজের দিক থেকে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে। 

মনুষ্যবিহীন বিভিন্ন অরবিটার, ল্যান্ডার এবং রোভার পাঠিয়ে মঙ্গলের ভূত্বক, জলবায়ু এবং ভূতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত মঙ্গলে পাঠানো নভোযানগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির আগে নানা কারনে ব্যর্থ হয়ে গেছে।

আসুন জেনে নিই নাসা থেকে প্রেরিত কয়েকটি মঙ্গলযানের নাম ও কাজ। 

১। মেরিনার-৪ (১৯৬৫)

২। মেরিনার-৯ (১৯৭১)  

৩। সোজর্নার (১৯৯৬) 

৪। মার্স ওডিসি ও মার্স এক্সপ্রেস (২০০১)

৫। বিগল টু (২০০৩) 

৬। স্পিরিট অ্যান্ড অপরচুনিটি (২০০৩)

See also  অসাধারণ স্থাপত্য চীনের মহাপ্রাচীর (গ্রেট ওয়াল)

৭। মার্স রিকনিসন্স অরবিটার (২০০৫) 

৮। কিউরিওসিটি রোভার (২০১১)

৯। মাভেন (২০১৩)

১০। ইনসাইট রোবট (২০১৮)

১১। পারসিভের‍্যান্স (২০২০)

মঙ্গলে এখন পর্যন্ত কোন মানুষ যায়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালিসা কারসন নামের ১৩ বছর বয়সী মেয়ে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন মঙ্গলে প্রথম মানুষ হিসেবে যাওয়ার জন্য। ২০৩৩-৩৪ সালের মধ্যে যাওয়ার জন্য বর্তমানে সবরকম প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

মঙ্গল গ্রহ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে এখন আমরা জানব এবং সেই সাথে জানব এখানে মানব বসতি স্থাপন নিয়ে কি বলছেন বিজ্ঞানীরা। 

মঙ্গল- 

  • সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ 
  • সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব প্রায় ২৩০ মিলিয়ন কিলোমিটার। 
  • পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ঘূর্ণনের গতি ও অবস্থানের কারনে বাড়ে ও কমে। পৃথিবী ও মঙ্গলের গড় দূরত্ব ১৪ কোটি মাইল। 
  • পৃথিবীর ২৪ ঘন্টা ৪০ মিনিটে মঙ্গলের ১ দিন হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর ৬৮৬ দিনে মঙ্গলের ১ বছর শেষ হয়। 
  • এটি সৌরজগতের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহ। এর উপগ্রহ দুটি- ফোবোস ও ডিমোস, যা আয়তনে চাঁদের ২০০ ভাগের ১ ভাগ। 
  • এন্টার্কটিকার চেয়েও শীতল ও সাহারা মরুভুমি থেকেও শুস্ক এই গ্রহের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 
  • মঙ্গলে পৃথিবীর মত অভ্যন্তরীণ চৌম্বক ক্ষেত্র নেই, তবে গঠনগত কারনে ভূত্বকের কিছু অংশ চুম্বকায়িত হয়ে আছে। এর কেন্দ্রভাগ মূলত লোহা দ্বারা গঠিত। কেন্দ্রের চারদিক সিলিকেট ও মেন্টল দ্বারা বেষ্টিত যা এর শিলাময় ও আগ্নেয় প্রকৃতির ভূত্বক গঠনে ভূমিকা রেখেছে। 
  • পার্বত্য উপত্যকা, গিরিখাত, মরুভূমি, শিলাময় অঞ্চল, মেরু অঞ্চল মিলিয়ে মঙ্গলের ভূত্বক অনেকটা পৃথিবীর মতই। আবার চাঁদের মত এখানে অভিঘাত খাদ-ও রয়েছে। সৌরজগতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত অলিম্পাস মনস এবং বৃহত্তম গভীর গিরিখাতগুলির অন্যতম ভেলস মেরিনারিস মঙ্গল গ্রহেই অবস্থিত। 
  • মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ঘনত্বহীন। এর বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর শতকরা ১ ভাগ মাত্র। এ কারনে এর ভূমিতে তরল জলের অস্তিত্ব সম্ভব নয়, কারন পানি জমাট বেঁধে যায়। তবে এর দুই মেরু অঞ্চল বরফে আবৃত।  ধারনা করা হয়, কখনও কোন কারনে যদি এই বরফ গলে যায় তবে পুরো গ্রহটি ৩৬ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাবে। এছাড়া কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ বরফের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে। ২০১৫ সালে নাসার দেয়া এক তথ্যমতে মঙ্গলের ভুমির গভীরে পুরু ক্রায়োস্ফেয়ারের ভিতরে প্রচুর তরল পানি আছে যা কোন আগ্নেয় বিস্ফোরণ ছাড়া বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়। 
  • এটি একটি ধুলিঝড়ময় গ্রহ। পৃথিবীর মত এই গ্রহেও ঋতুচক্র আছে। 
  • এখানে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর মত আকাশের রঙ পরিবর্তন হয়না। 
  • এর আবহাওয়া ও ভূত্বকের গঠনের কারনে এখানে মানব বসতি সম্ভব নয় বলে ধারনা করা হয়। তবে বিজ্ঞানীরা সবধরনের চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই কাজে সফলতা আনতে। 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *